‘ এই মেয়ে! এই মেয়ে! কি করছো? এখানে দাঁড়িয়ে শাড়ি খুলছো কেন?’
আকস্মিক এক পুরুষালির মুখের এমন কথা শুনে পুরোই আঁতকে উঠলো আদ্রিজা। সাথে সাথে নিজের শাড়ির আঁচলটাকে শক্ত করে চেপে ধরে পিছন ঘুরে তাকালো সে। তাঁর সামনেই সুঠাম দেহের লম্বা চুরা একটা ছেলেকে দেখে আরোই চমকে উঠলো যেন এত বড় একটা ছেলে এই রুমের মধ্যে ছিল অথচ সে খেয়াল করে নি। কিন্তু রুমে ঢোকার সময় রুমটা তো ফাঁকাই ছিল তাহলে হুট করে কোথা আসলো ছেলেটা?’
কিছুক্ষন আগে,
আজ আদ্রিজার বান্ধবী আরুর বার্থডে। সেই উপলক্ষে সুন্দর একটা কালো রঙের সিল্কি শাড়ি পড়ে সেজেগুজে এসেছিল সে। ফাস্ট টাইম শাড়ি না পড়লেও শাড়ি সামলে হাঁটতে পারে না আদ্রিজা। যার দরুন বাড়ির ভিতর ঢুকতে না ঢুকতেই শাড়ি কুঁচি খুলে যায় যায় অবস্থা। শাড়ির বেহাল অবস্থা দেখে আদ্রিজা চটজলদি চলে আসে আরুর রুমে। রুমটা ফাঁকাই ছিল, তবে ওয়াশরুমটা খেয়াল করে নি আদ্রিজা। রুমটা ফাঁকা দেখে আয়নার দিকে ঘুরে জাস্ট শাড়িটা ঠিক করতে নিয়েছিল আদ্রিজা। ঠিক সেই মুহুর্তেই অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষের ভয়েস শুনে পুরোই চমকে উঠলো আদ্রিজা। আদ্রিজা বুঝলো না হুট করে ছেলেটা আসলো কোথা থেকে? তবে কি ওয়াশরুমে ছিল ছেলেটা । পর পর সব কথাগুলো ভাবলো আদ্রিজা। আদ্রিজার ভাবনার মাঝখানেই ক্ষিপ্ত মেজাজ নিয়ে বললো অভ্র,
‘ কি হলো? কথা বলছো না কেন?’
সঙ্গে সঙ্গে চমকে উঠলো আদ্রিজা। কিছুটা হতভম্ব গলায় বললো সে,
‘ আসলে?’
আর কিছু বলার আগেই সেখানে উপস্থিত হলো আদ্রিজার বেস্টফ্রেন্ড আরু। খানিকটা বিষন্ন মাখা মুখ নিয়ে বললো সে,
‘ আদ্রিজা হলো তোর?’
পরক্ষণেই নিজের রুমে তার ভাই অভ্রকে দেখে খানিকটা অবাক হয়ে বললো আরু,
‘ ভাই, তুই আমার রুমে?’
উওরে অভ্র আরুর দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ হুম আমি আসলে আমার রুমের ওয়াশরুমটার ছিটকানিটা নষ্ট হয়ে গেছে তাঁরওপর তুষার আছে রুমে তাই আর কি।’
অভ্রের কথা শুনে আরু বিস্মিত হয়ে বলে উঠল,
‘ ওহ।’
‘ হুম তা এই মেয়েটা কে?’
অভ্রের কথা শুনে আরু আদ্রিজার কাছে দাঁড়িয়ে বললো,
‘ ভাই,ও আমার বেস্টু আদ্রিজা।’
এমন সময় সেখানে এগিয়ে আসলো তুষার। হতভম্ব গলায় বললো,
‘ অভ্র ভাই, কই তুই তোর গার্লফ্রেন্ড থুড়ি তোর বান্ধবী ললিতা এসেছে।’
সঙ্গে সঙ্গে চোখ গরম করে তাকালো অভ্র তুষারের দিকে। আর আরু হেঁসে ফেললো। বললো,
‘ লজ্জা পাওয়ার মতো কিছু হয় নি, আমি কিন্তু সব জানি ভাই।’
অভ্র এবার তাকালো আরুর দিকে। চোখ গরম করে বললো,
‘ কি জানিস তুই?’
‘ এই যে লাবন্য আপুর সাথে তোমার ইন্টুপিন্টু চলছে।’
আরুর কথা শুনে তুষার, আদ্রিজা দুজনেই হেঁসে ফেললো। যা দেখে অভ্র আরুর দিকে তেরে এসে বললো,
‘ তোকে তো আমি?’
অভ্রের কান্ডে আরু ভয় পেয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বললো,
‘ আম্মু বাঁচাও?’
তুষার তখনও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছিল। তারপর হুট করেই বলে উঠল,
‘ আর কতদিন এইভাবে নিজের ভালোবাসাকে লুকিয়ে রাখবে ভাই এবার ললিতা আপাকে ললিতা ভাবি বানিয়ে দেও।’
‘ দাঁড়া ললিতা থুড়ি লাবন্যকে তোর ভাবি বানাচ্ছি।’
বলেই তেরে গেল অভ্র তুষারের দিকে। অভ্রের কান্ডে তুষারও দিল দৌড়। তাঁকে আর পায় কে?’
অভ্র দরজার কাছ পর্যন্ত গিয়েই দাঁড়িয়ে পড়লো।’
আর এদিকে আদ্রিজা চুপচাপ মুখ চেপে হাসলো এদের কান্ড দেখে। হাসির আওয়াজ কানে আসতেই অভ্র পিছন ঘুরে তাকালো। দেখলো আদ্রিজাকে। ব্লাক শাড়ি,চুলগুলো বেনুনী করা, চোখে মোটাফ্রেমের চশমা, আর একদম সাদা মাটা মেকাপ দিয়েছে মুখে। আজকালকার যুগে হয়তো খুব কম মেয়েই আছে যারা সাজগোছ করে না। এই মেয়েটা হয়তো সেই দলেরই একজন হবে। হঠাৎই অভ্রের আদ্রিজার হাসির কথা মনে পড়তেই হাল্কা ক্ষিপ্ত মেজাজ নিয়ে বললো,
‘ এই যে ‘মিস ব্ল্যাকবেরি’ এত হাসার মতো কিছু হয় নি।’
সঙ্গে সঙ্গে হাসি থামিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে পড়লো আদ্রিজা। বুকটা যেন হুট করে কেঁপে উঠলো তাঁর। অভ্র বেরিয়ে যেতে নিলো রুম থেকে হঠাৎই কি মনে করে আরেকবার পিছন ঘুরে তাকিয়ে আদ্রিজাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘ আর হ্যাঁ নেক্সট টাইম কোনো রুমে ঢুকলে ওয়াশরুমে কেউ আছে কি না বিষয়টা খেয়ালে আনতে হবে কিন্তু না হলে,,
বলেই থেমে যায় অভ্র। অভ্রের কথায় লজ্জায় কুঁকড়ে উঠলো আদ্রিজা। নিজের কাজে নিজেই লজ্জিত সে। আদ্রিজার লজ্জা মাখা মুখ দেখে তেমন কিছু না বলেই চলে যায় অভ্র নিজের রুমে দিকে।’
______
শার্টের হাতা বোল্ড করতে করতে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে লাগলো অভ্র। হঠাৎই চোখ যায় তাঁর নিচে তাঁর চিরচেনা বন্ধু মহলের দিকে লাবন্য, শিশির, আদিত্য, আহির আর তুষার। যদিও তুষার অভ্রের কাজিন লাগে। একই ভার্সিটির বন্ধু ছিল তাঁরা। এখন পড়াশোনা কমপ্লিট করে যে যার বাবার কাজে নিযুক্ত হয়েছে মাত্র। অভ্রও তাঁর বাবার নিজস্ব কোম্পানিতে নিউ বস হিসেবে যুক্ত হয়েছে কিছুদিনই হয়েছে। অভ্রের বন্ধুরা অভ্রকে নিচে আসতে দেখেই খুশি হয়ে বললো,
‘ ওই তো অভ্র চলে এসেছে?’
সাথে সাথে সবাই তাকালো অভ্রের দিকে। লাবন্যও তাকালো অভ্রের দিকে। চোখাচোখি হলো দুজন। লাবন্য আর অভ্রের সম্পর্কটা বন্ধুত্বের হলেও অভ্র লাবন্যকে শুধু বন্ধুর নজরে দেখে না। তবে সাহস করে সেই নজরের কথা বলা হয় নি লাবন্যকে। এই বিষয়টা তেমন কেউই জানতো না কিন্তু সেদিন তাঁর পারসোনাল ডাইরিতে তুষার হাত দিয়ে সব জেনে ফেলে। যার দরুন হাঁটতে বসতে তাঁকে ব্ল্যাকমেল করেই যাচ্ছে। তবে তুষার কথা দিয়েছে যতদিন না সে চাইবে ততদিন তাঁর ভালোবাসার কথাটা লাবন্যকে বা তাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের কাউকেই বলবে না। কিন্তু মাঝখান দিয়ে আরু সব জেনে যায়। তাও আড়াল থেকে তাঁর আর তুষারের কথোপকথন শুনে। তারপর আর কি দুই ভাইবোন মিলে সমানে তাঁকে পঁচিয়ে চলেছে। না পারছে কিছু করতে আর না পারছে সইতে।’
পরপর সব কথাগুলো ভাবতে ভাবতে নিচে নেমে এলো অভ্র। অভ্র নামার কিছুক্ষনের মধ্যে আদ্রিজাও নেমে আসলো চটজলদি। এখন কেঁক কাটবে আরু।’
অতঃপর বলতে না বলতেই কেক কাটাকাটি পর্ব শেষ হতেই যে যার বাড়ি যাওয়ার জন্য উদ্দেশ্য রওয়ানা হওয়ার প্রস্তুতি নিলো। এই অনুষ্ঠানের সময় মাঝেসাঝে শুধু একটু আকটু চোখাচোখিই হয় আদ্রিজার সাথে অভ্রের।’
রাত প্রায় এগারোটার কাছাকাছি। দরজা সামনে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে লাবন্য,শিশির, আদিত্য, আহির,তুষার, অভ্র, আরু আর অভ্রের মা। মুলত সবাইকে বিদায় জানাতেই দাঁড়িয়ে আছে সবাই। হঠাৎই আরু বলে উঠল,
‘ আবার আসবে কিন্তু লাবন্য আপু।’
উওরে লাবন্য মুচকি হেঁসে বললো,
‘ নিশ্চয়ই।’
অতঃপর সবাইকে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে পড়লো সবাই। যাওয়ার আগে লাবন্যও অভ্রের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ যাচ্ছি আবার পড়ে দেখা হবে।’
লাবন্যের কথা শুনে অভ্রও মুচকি হেঁসে বললো,
‘ হুম।’
অভ্রের কথা শুনে তুষার অভ্রের কাঁধ জড়িয়ে ধরে বললো,
‘ শুধু অভ্রকে যাচ্ছি বললে হবে ললিতা সুন্দরী আমাদেরও তো বলতে হবে।’
উওরে তুষারের মাথায় চাটি মেরে বললো,
‘ তুই যেদিন আমায় ললিতা বলা বন্ধ করবি সেদিনই বলবো।’
‘ যা বান্ধর মাইয়া।’
‘ তুইও বান্দর পোলা।’
ওদের ঝগড়া দেখে অভ্রের মা বলে উঠল,
‘ হয়েছে হয়েছে আর ঝগড়া করতে হবে না। বললাম আজকের রাতটা থেকে যেতে।’
‘ তা কি করে হয় আন্টি?’
‘ কেন হয় না কতদিন পর তোরা এলি বলতো?’
‘ আবার আসবো আন্টি।’
উওরে মুচকি হেঁসে বললো অভ্রের মা,
‘ সত্যি আবার আসিস কিন্তু।’
‘ নিশ্চয়ই আন্টি। আজ তবে আসি।’
‘ হুম আয়।’
প্রতি উওরে সবাই ‘আসছি ‘বলে একে একে বেরিয়ে পড়লো নিজেদের বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে।’
সবাই যেতেই অভ্র তাকিয়ে রইলো লাবন্যের যাওয়ার পানে। যা দেখে তুষার অভ্রের কানে কানে বললো,
‘ আর কতকাল শুধু দেখেই যাবে অভ্র ভাই, এবার তো বলে ফেলো, আই লাভ ইউ মাই ললিতা সুন্দরী থুক্কু লাবন্য সুন্দরী।’
উওরে বাড়ির ভিতর যেতে যেতে বললো অভ্র,
‘ বলতে তো চাই কিন্তু বলতে আর পারছি কই?’
‘ বেশি দেরি করলে কিন্তু পাখি ফুড়ুত করে উড়ে যাবে তারপর কিন্তু চাইলেও ধরতে পারবে না। তাই বি কনফিডেন্স যাকে ভালোবাসো তাকে বলে ফেলো।’
বলতে বলতে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল অভ্র আর তুষার। সিঁড়ির ঠিক পাশ দিয়েই দাঁড়িয়ে ছিল আদ্রিজা। তুষারের বলা কথাটা সেও শুনেছে হঠাৎই আনমনে ভাবলো সে,
‘ তাহলে কি আমারও উচিত আমার ভালোবাসার মানুষটিকে ভালোবাসি বলে ফেলা?’
#চলবে…..
গোধূলি_বিকেলে_তুমি_আমি(০১)
লেখিকা:তানজিল_মীম
গল্প যার যার কাছে পৌছাবে সকলেই গল্পে লাইক কমেন্ট করবেন প্লিজ
২য় পর্বটা আমার ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করেছি।লিংকে ক্লিক করে পর্বটা পড়ে আসুন।আর সকলে দয়া করে আমার ফেসবুক গ্রুপে জয়েন হবেন।পরবর্তী সকল পর্বগুলা শুধুমাত্র আমার ফেসবুক গ্রুপেই পোস্ট করব❤️
Leave a comment