ব্যারিস্টার হাসান গাজী নিখোঁজ হয়েছেন। খুলনা শহরের প্রধান দুই মাফিয়া ডনের কালো টাকা সাদা করার কর্ম করতেন তিনি। তাঁরা হলেন জামসেদ মোল্লা এবং মোজাফফর। ভয়ংকর এই দুই ব্যক্তির কাছে শহর দুইভাগে বন্টিত। জামসেদের কাজ ড্রাগ নিয়ে আর মোজাফফরের অস্ত্র-চোরাচালানের ব্যবসা।
খুলনা শহর। সুন্দর এই শহরে আলোর নিচেই আছে অন্ধকার। পুলিশ, সাংবাদিক অনেককিছু দেখেও দেখে না। সিস্টেম বলে কথা। এই সিস্টেম ভাঙতে শহরে পা রেখেছেন একজন রহস্যময় ব্যক্তি। তাঁর অপরাধের সঙ্গি বা অনুগতরা তাঁকে ‘দাদা’ বলে ডাকে। সকল নিয়ম-কানুনের বাইরে হেঁটে বেড়ান তিনি। কি উদ্দেশ্য তাঁর?
হাসান গাজীর ঘটনাটি গুম না খুন নাকি পলায়ন তা কারো জানা নেই। পুলিশ কর্মকর্তা হাদী, তাঁর বিশ্বস্ত জুনিয়র বাবুল এবং সৎ সাংবাদিক সামিয়া জড়িয়ে পড়েন এমন এক ঘটনায় যা তাদের তিনজন অথবা পুরো মাফিয়া চক্র এবং পুলিশ বাহিনীর চেয়েও বড়। জুয়ারি এনামুল, ক্রিকেটার সরফরাজের কীর্তি বা উদ্দেশ্য কি এই ঘোলাটে পরিস্থিতিতে?
একদম গ্যাংস্টার ঘরাণার থ্রিলার পড়লাম অনেকদিন পর মনে হয়। সিদ্দিক আহমেদের লেখনীর ফ্যান আমি সেই ‘ধনুর্ধর’ থেকেই। তবে এই প্রথম সম্ভবত তাঁর কোন বই পাঠ হল যা ঐতিহাসিক থ্রিলার বা ইতিহাসকে উপজীব্য করে লিখা থ্রিলার নয়। এই গ্রন্থে লেখকের লেখালেখির মধ্য দিয়ে সুন্দর এক যাত্রা হয়েছে। খুলনা সিদ্দিক আহমেদের প্রিয় শহর। এই শহরের একধরণের মিনিমালিস্ট এপ্রোচে সুন্দর বর্ননা করেছেন লেখক। সেই হিসেবে তাঁর লিখা অন্যকরমের একটি উপন্যাস পাঠ হল। লেখকের জলতরঙ্গের মত গল্পকথনের সাথে সাথে প্রতিটি চরিত্রের সংক্ষিপ্ত তবে কার্যকর চরিত্রায়ন সার্থক হয়েছে।
‘দাদা’ চরিত্রটি মূলত শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘কালো বেড়াল, সাদা বেড়াল’ উপন্যাসের ‘দাতা’ চরিত্রটির প্রতি একটি ট্রিবিউট। আন্ডারগ্রাউন্ডের মধ্যকার চরিত্রগুলোর বিভিন্ন চাল-চলন, বৈশিষ্ট্য, নিজস্ব কিছু অলঙ্ঘনীয় নীতিমালা এবং রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ যোগসূত্র ফুটিয়ে তুলতে লেখকের খুব বেশি শব্দ খরচ করতে হয়নি। উপন্যাসটি সম্ভবত লিখা হয়েছিলো কোন সিনেমা বানানোর উদ্দেশ্যে। চিত্রনাট্যও নাকি তৈরি করা হয়ে গিয়েছিল।
শহরে ঠিক দশ বছর পূর্বের মত ঝড় আসছে। আসন্ন এই ঝড়ে বয়ে যাবে রক্তগঙ্গা। মাস্টারমাইন্ড দাদার কিছুটা কাছাকাছি ব্রেইন আছে সৈয়দ হাদীর। বাবুল এবং সামিয়াকে সাথে নিয়ে পারবেন কি তিনি অনেক নিরপরাধের জীবন রক্ষা করতে?
ব্যক্তিগত জীবনে দাবা আমার সবচেয়ে প্রিয় একটি গেইম। দাবা একসময় চারজনের খেলা ছিল। এইকারণে এর অপর নাম ‘চতুরঙ্গ’। চারজনের এই খেলায় একজন মিত্র এবং দু’জন অমিত্র থাকতো। সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দাবারু তিনি হতেন যিনি শুধুমাত্র দুই অমিত্রকে জয় করতেন না, একইসাথে মিত্রকেও জয় করতেন।
জামসেদ, মোজাফফর, পুলিশ এবং দাদার এই চতুরঙ্গের বাইরেও কি কেউ আছে? যে শহরের এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সামাল দেয়া বা আরো খারাপ করতে পারেন? ধুরন্ধর জামসেদ, ঠান্ডা মাথার মোজাফফর, চৌকশ হাদী এবং বাটারফ্লাই ইফেক্ট সৃষ্টি করার পেছনের কারিগর সেই রহস্যময় দাদা, কে শেষ পর্যন্ত এই চতুরঙ্গে চেকমেইট করতে পারবেন? সম্ভবত ঘোড়ার চাল যে ভালো দিতে পারবে সে। তিনিই চতুরঙ্গের অশ্বারোহী।
বুক রিভিউ
চতুরঙ্গের অশ্বারোহী
লেখক : সিদ্দিক আহমেদ
প্রথম প্রকাশ : জুন ২০২১
প্রকাশনা : অবসর প্রকাশনা সংস্থা
প্রচ্ছদ : ফরিদুর রহমান রাজীব
জনরা : গ্যাংস্টার থ্রিলার
রিভিউয়ার : ওয়াসিম হাসান মাহমুদ
Leave a comment