জঙ্গলের পাশের রাস্তাটা ধরে সামনে এগোলে ট্রিগ্যাপ গ্রামের একদম শুরুতেই বামদিকে একটা কটেজ। ফস্টারদের বাড়ি। সেখানে ফস্টার দম্পতি, তাদের ১১ বছরের মিষ্টি মেয়ে উইনফ্রেড ফস্টার (উইনি) আর উইনির দাদির বাস। জঙ্গলটাও তাদের সম্পত্তি। উইনি বড় হচ্ছে মা ও দাদির কড়া শাসনে। আর ভাবছে সবকিছু ছেড়ে একদিন পালিয়ে যাবে জঙ্গলে। কিন্তু যাওয়ার আর সাহস করে উঠতে পারে না।
উইনিদের জঙ্গলে বাস করে অদ্ভুত টাক পরিবার। হ্যাঁ অদ্ভুত; কারণ টাক পরিবারের সদস্যদের বয়স বাড়ে না! এককথায় তারা অমর!
আগস্টের উত্তপ্ত একদিনে তিনটি ঘটনা ঘটলো-
১. ভোরবেলায় মেই টাক তার বুড়ো ঘোড়াটা নিয়ে ট্রিগ্যাপ গ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো। প্রতি দশ বছর পর পর সে এভাবে গ্রামটির কাছে যায়। কারণ তার আদরের দুই ছেলে তখন বাড়িতে আসে।
২. দুপুরবেলা ছোট্ট বালিকা উইনি তার ধৈর্যের শেষ সীমায় উপস্থিত হয়ে বাড়ি থেকে পালানোর সিদ্ধান্ত নেয়, যদিও সেদিন পালায় না।
৩. সন্ধ্যাবেলায় ফস্টারদের বাড়ির সামনে হলুদ স্যুট পরা এক আগন্তুককে দেখা যায়। দেখে মনে হচ্ছিল সে যেন কাউকে খুঁজছে। কিন্তু সে কাউকে কিছু বলছে না।
আপাতদৃষ্টিতে তিনটি ঘটনার মধ্যে কোনো সংযোগ না থাকলেও আশ্চর্যজনকভাবে ঘটনাগুলো একসাথে মিলে গেছে। আর তার কেন্দ্রে ছিল ঐ জঙ্গলটা, ঠিক বৃত্তের কেন্দ্রের মতো। কিন্তু কেনো? কোন রহস্য লুকিয়ে আছে ঐ জঙ্গলে?
উপন্যাসটি সম্পর্কে একবাক্যে বলা যায় “বিন্দুর মধ্যে সিন্ধু”। এই কাজটি খুব কম লেখকই করে দেখাতে পারেন। অল্প পরিসরে জীবনের গভীর কোনো দর্শনকে তুলে ধরা মোটেও সহজ কাজ নয়।
গল্প যদিও রূপকথার মতো, তবুও পড়তে পড়তে গল্পের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছিলাম। চোখের সামনেই যেন ঘটছিলো ঘটনাগুলো। এক কথায় অসাধারণ লেগেছে। যারা আর্নেস্ট হেমিংওয়ে’র “দি ওল্ড ম্যান এন্ড দ্য সি” পড়ে চমৎকৃত হয়েছেন, তারা এই বইতেও মনের খোরাক খুঁজে পাবেন।
অনুবাদক ইরাজ উদ্দৌলা দিবাকর’র এটি দ্বিতীয় অনুবাদ কর্ম। কিন্তু বই পড়লে পাঠকদের মনেই হবে না এটা অনুবাদকের মাত্র দ্বিতীয় কাজ।
বেশ ভালো অনুবাদ। সহজ-সাবলীল ভাষায় অনুবাদ করা। পড়তে একটুও কষ্ট হয়নি। শুধু কয়েকটা জায়গায় আরেকটু শ্রুতিমধুর হতে পারতো। তাছাড়া বাকিটুকু চমৎকার।
ইদানীংকার বেশিরভাগ প্রচ্ছদই আমার তেমন ভালো লাগে না। কিন্তু সজল চৌধুরী’র করা এই বইটার প্রচ্ছদ আমার খুব পছন্দ হয়েছে। প্রচ্ছদের দিকে তাকালেই দেখা যায় ছোট্ট উইনি ঘন অরণ্যের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। দেখেই যে কারো পছন্দ হয়ে যাবে।
ভূমির বইয়ের বাঁধাই বেশ ভালো। তবে পেইজ কিছুটা পাতলা হয়ে থাকে সবসময়ই। এই বইয়ের পেইজও পাতলাই, তবে পেইজগুলো বেশ মসৃণ। ব্যাপারটা ভালো ছিল। এছাড়া বইতে বানান ভুল তেমন চোখে পড়েনি।
সবমিলে বইটা চমৎকার। শিশুতোষ হলেও বড়দেরও খারাপ লাগবে না একদমই। তারাও সমানভাবে উপভোগ করতে পারবেন। সময় করে পড়ে ফেলুন।
বই : টাক এভারলাস্টিং
লেখক : নাটালি ব্যাবিট
অনুবাদক : ইরাজ উদ্দৌলা দিবাকর
জনরা : শিশুতোষ উপন্যাস/ইয়াং-অ্যাডাল্ট
প্রকাশনী : ভূমিপ্রকাশ
Leave a comment