বইঃ টুশি
লেখকঃ অঞ্জন হাসান পবন
ধরনঃ সমকালীন উপন্যাস
বিক্রয়মূল্যঃ ২৫০/-
প্রকাশনীঃ দূরবীণ
গাঁজার নৌকা পাহাড়তলী যায় ও মিরা বাই….
হ্যালো আপু, জি আপনাকে।
হ্যাঁ বলুন।
এটাতো পাহাড়তলী তাই না?
জি।
আপু তাহলে নদী টা কোথায়?
কোন নদী?
ওই যে গাঁজার একটা নৌকা যে নদী দিয়ে যায়।
“টুশি” উপন্যাস নিয়ে বলার মত কোন ভাষা আমার নাই। আমি ঘোরের মধ্যে চলে গেছিলাম এটা পড়ে। একবারে পড়ে শেষ করা আমার দ্বিতীয় উপন্যাস এটা। গল্পটা সাধারনের মধ্যে অসাধারণ। উপন্যাসটা ব্যতিক্রম। একজন লোক যার সম্প্রীতি নামে একটি প্রকাশনী আছে। ভীষন খ্যাপাটে ধরনের মানুষ আর শান্ত একটা মেয়ের গল্পে এই উপন্যাস। প্রথম দুই তিন পৃষ্ঠা পড়ে আমি ভেবেছিলাম রিয়া মারা গেল এবার ঝিলমের পরবর্তী জীবনের গল্প শুরু হবে কিন্তু অদ্ভুত ভাবে এই উপন্যাসের আসল টুইস্ট আছে শেষ পাতা। এই উপন্যাসটা প্রেমের উপন্যাস নাকি দুটো মানুষের জীবনের কাহিনী? আমার মনে হয়েছে এই উপন্যাসটা একাধারে প্রেমের উপন্যাস এবং কিছু কিছু মানুষের জীবনের কাহিনী। এখানে কিছু কিছু সূক্ষ্ম বিষয় তুলে ধরা হয়েছে যেগুলো নিয়ে আমরা কখনো চিন্তাও করি না। একটা হাসপাতালে গল্পটা শুরু যেখানে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ক্যান্সারের সাথে লড়ছে রিয়া। তার পাশে বসে আছে ঝিলম। ঝিলমের ভেতরের ভালোবাসা কিংবা কষ্ট সে কখনো প্রকাশ করেনি। দুজনের গল্পটা শুরু হয় পাহাড়তলীতে। কি অদ্ভুত ভাবে পরিচয়; অনেকটা সময় কাটানো। তারপর রিয়ার ঢাকায় চলে আসা। এমন না যে তাদের সাজানো-গোছানো প্রেম ছিল। তারা বিয়ে করে ফেলে হঠাৎ করেই। তারপর তারা চলে যায় সুন্দরবনে । সুন্দরবনকে খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরা হয়েছে এখানে। “মলা মাছের জীবন নিয়ে সুন্দরবন দেখে শেষ করা যাবে না।”- লাইনটা দারুন। এই উপন্যাসে আরেকটা জিনিস ফুটে উঠেছে সেটা হচ্ছে ঝিলমের তার মায়ের প্রতি ভালোবাসা। তার মা মারা গেছে বহুদিন আগে। ঝিলম তখন কলেজে পড়তো। কাপড় সেলাই করে তার মা সংসার চলাতো। একদিন ঝিলম ঘরে এসে দেখে মা মেশিন এর উপর থেকে উঠছে না সে টের পায় তার মা মারা গেছে। তারপর থেকে তার মন খারাপ হলে সে প্রায়ই তার মায়ের কবরের পাশে গিয়ে শুয়ে থাকে। তার মায়ের সাথে কথা বলে। সে টের পায় মাঝে মাঝে তার মা তার ঘরে আসে। কল্পনা হলেও এ লাইনগুলো খুব ভালো লেগেছে।
ঝিলম-রিয়ার সাজানো-গোছানো না হলেও ছোটখাটো একটা সংসার। যেখানে তারা প্রায়ই ওয়াটার ইলিশ দিয়ে ভাত খায়। ঝিলমের জীবনের প্রতি কোনো আক্ষেপ নেই, মেয়েদের চাওয়া বেশি থাকলেও রিয়া কিন্তু ঝিলমের এসব কিছু মেনে নেয় ভালোবাসা থেকে। অদ্ভুতভাবে তারা একে অপরকে ভালোবাসে। তারপর একদিন অন্তঃসত্ত্বা হয় রিয়া। নতুন অতিথির আগমনে তারা খুশি হলেও ঝিলম আর্থিক টানা পোড়েনে পরে যায়। রিয়া একদিন চিরকুট লিখে ঝিলমের দুই কামড়ার বাসা ছেড়ে চলে যায়। বিভিন্ন টেস্টে ধরা পড়ে জরায়ুর ক্যান্সারে ভুগছে রিয়া। ঝিলম একদিন সকালে হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারে যে মারা গেছে রিয়া। ঝিলম আর কিছু ভাবতে পারে না। এই উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র হচ্ছে টুশি। উপন্যাসে কোন বক্তব্য না থাকলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা চরিত্র টুশি। রিয়া আর ঝিলামের ছোট্ট সংসারে একটা অংশ সে। তাদের সন্তানের মত। টুশি রিয়ার পোষা কুকুর হলেও রিয়া মারা যাওয়ার পর সে তার জন্য কান্না করে। রিয়া মারা যাওয়ার পর টুশি কে নিয়ে ঝিলম বেরিয়ে আসে। তারপর শুরু করে তার প্রকাশনী সম্প্রীতি’র কাজ। বইমেলায় প্রকাশনীর বড় একটা প্যাভিলিয়ন হয়। খুব আশ্চর্যজনক ভাবে আমি ভেবেছিলাম যে এখানে উপন্যাসটা হয়তোবা শেষ। একটা প্রকাশনী দাঁড়িয়ে গেছে; এরপর হয়তো উপন্যাসটা শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু দেখলাম যে আমার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। রিয়া ফিরে আসে। অনেক বছর পরে ফিরে আসে তার গর্ভে যে সন্তান ছিল তাকে নিয়ে। ছোট্ট একটা মেয়ে নাম সম্প্রীতি। রিয়া সম্প্রীতিকে কোলে নিয়ে বইয়ের স্টলের সামনে এসে দাঁড়ায়। ঝিলম নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারেনা। সে ভাবে হয়তো তার চোখের ভুল কিন্তু শেষে বোঝে আসলেই রিয়া এসেছে। রিয়ার বাবা তাকে ভারতে নিয়ে ট্রিটমেন্ট করায় এবং সে সুস্থ হয়ে যায়। রিয়ার স্বৈরাচারী বাবা বুঝতে পারে ঝিলমের কাছেই রিয়ার শান্তি তাই সে রিয়াকে ঝিলমের কাছে পাঠিয়ে দেয়। সবশেষে আমরা দেখতে পাই একটা সুন্দর সুখী পরিবার তাদের জীবনের সমস্ত চড়াই উতড়াই পেরিয়ে রিকশায় করে তাদের নীড়ে ফিরে যাচ্ছে।
রেটিং – ৯/১০
© Srijon আপু
Leave a comment