বইঃ ন হন্যতে(১৯৭৪)
লেখিকাঃ মৈত্রেয়ী দেবী
“অজঃ নিত্য শাশ্বতোহয়ং পুরানো ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে—”
মির্চা ইউক্লিড, যিনি একজন ফরাসী এবং খ্রিষ্টান, অপরপক্ষে মৈত্রেয়ী দেবী অর্থাৎ অমৃতা হিন্দু। অমৃতার বাবা একজন অধ্যাপক। তারা কলকাতা থাকতেন এবং বেশ আধুনিক ছিলেন। তার ছাত্র মির্চা বিদেশ বিভূঁইয়ে ভারত উপমহাদেশে এসেছে জ্ঞানার্জনের জন্য। তার থাকায় অসুবিধার জন্য নরেনবাবু অর্থাৎ অমৃতার বাবা তাকে নিজ বাসায় থাকতে দেন। মির্চা এবং অমৃতা দু’জনেই হলেন জেষ্ঠ্যতাত’। মির্চা দর্শন, বাংলা এবং সংস্কৃত শিখতেন। তাই তাদের দু’জনকে অনেকটা সময় একসাথে কাটাতে হয়। মির্চা যখন তাদের বাসায় আসে তখন তার বয়স ২১ এবং অমৃতার বয়স ১৪।
তাদের মধ্যে যখন ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠে তখন তাদের মনোভাব এমন,
“জনম অবধি হাম রূপ নেহারিনু,
নয়ন না তিরপতি ভেল,
লাখ লাখ যুগ হিয়ে হিয়া রাখনু,
তবু হিয়া জুড়ান না গেল।”
ভালোবাসার এক বছর পর ই অর্থাৎ ১৯৩০ সালে,
যখন তাদের অবস্থা তার বাবা-মা অবগত হন তখন ই তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। মির্চাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন এবং অমৃতাকে বন্দী করে দেন।
তখন মনোবিকার ঘটে দু’জনার ই।
“দুঃখ, শোক, রাগ এর যে কোন অবস্থায়ই শরীরে বিষ হয়। তখন জলীয় কিছু খেলেই যথেষ্ট।”
ঠিক তার দু’বছর পর অমৃতার বিয়ে হয়ে যায় এবং তাকে পাহাড়ি ভূমিতে স্বামীর সহিত নির্জনে চলে যেতে হয়। আর মির্চা ঋষি, সন্ন্যাসী হয়ে বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়ায়।
এ সময় খুব ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ভালোবাসার বিচ্ছেদে তাঁর সান্ত্বনা..
“অবস্থার হাতে নিষ্ক্রিয়ভাবে নিজেকে সমর্পণ করে তুমি থাকতে পারবে না- নিজেকে পূর্ণতর করে তুমি সৃষ্টি করতে পারবে… হতাশ হয়ো না। নিজের উপর শ্রদ্ধা রেখ, চারিদিক থেকে আপনাকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে সেই গভীর নিভৃতে নিজেকে স্তব্ধ কর যেখানে তোমার মহিমা তোমার ভাগ্যকেও অতিক্রম করে।”
১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বর মাস। দীর্ঘ তেতাল্লিশ বছর পর বিরহ যেন উৎড়ে উঠে। আর থাকতে না পেরে অবশেষে তাদের দেখা হয়। এমন মনে হয় যেন ১৯৩০ সাল তাদের বিচ্ছেদ করতে প্রকৃতি উঠেপড়ে লেগেছিল আর ১৯৭২ সাল তাদের মিলনে উঠেপড়ে লাগে।
তাদের যখন দেখা হয় তখন মির্চা আর তার দিকে ফেরে নি। তাকে দেখে নি। কারণ সে অন্ধ হয়ে গিয়েছিল।💔
ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে………..♥♥♥
তারা এক না হয়েও তারা এক, তাদের ভালোবাসা অমর। প্রেম তাদের আলোকিত করে রেখেছে।
মির্চা একবার অমৃতাকে বলেছিল, “যদি তোমার সঙ্গে আমার বিয়ে নাও হয় আমি তোমায় তিনবার দেখতে চাই। একবার তুমি মা হবার পর, একবার যখন তুমি খুব বৃদ্ধা আর একবার তোমার মৃত্যুশয্যায়।”
Leave a comment