বুক রিভিউঃ১৭
বইয়ের নামঃ বিষাদবাড়ি
লেখকঃ Nahid Ahsan
প্রকাশনাঃ জ্ঞানকোষ প্রকাশনী
মূল্যঃ২৩০৳
পৃষ্ঠাঃ১১৮
“তারপর?
মানুষ মানুষেরে যায় ছাড়ি-
হায়!
একলা পড়ে থাকে কত দুঃখ জমানো নিয়ে,
ভীষণ শূণ্য – বিষাদবাড়ি।”
এই ছেড়ে চলে যাওয়ার গল্পগুলোতে সাক্ষী হিসেবে পড়ে থাকে বছরের পর বছর ধরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা একটা নিঃসঙ্গ বাড়ি। মানুষের মতো নিজের কাছে জমতে থাকা দুঃখগুলোকে প্রকাশ করতে না পারার আফসোস নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। মানুষ আসে,চলে যায়। তারপর নতুন মানুষ আসে,সেও চলে যায়। কেউ কেউ আবার ফিরে আসে। কেউ বা কখনোই ফিরে আসেনা। কিন্তু বাড়িটা রয়ে যায়- কত স্মৃতি আগলে রাখে অকপটে। কি ভীষণ শূণ্য সেসব বাড়ি। ঠিক যেন জয়নবদের এই বাড়ি-বিষাদবাড়ি।
কাহিনী সংক্ষেপঃ
বাবার মৃত্যুর পর এখন জয়নবের পুরো পৃথিবী জুড়ে রয়েছে শুধুমাত্র তার মা। আর মাকে নিয়েই তার বেচেঁ থাকা। এরপর মায়ের কথায় বিয়ে করে হালিমাকে। বিয়ের পর হালিমার সাথে তার প্রেম,ভালোবাসাপূর্ণ এক মধুর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মা আর হালিমাকে নিয়ে জয়নবের সংসার খুব সুন্দর ভাবে চলছিলো।
কাহিনী এভাবেই এগিয়ে যায়। হঠাৎ করেই একদিন জয়নবের মা চলে গেলেন না ফেরার দেশে। জয়নবের আকাশে দেখা দেয় তখন কালো মেঘের ঘনঘটা। ধুমাচ্ছন্ন ধুসরতায় ঢাকা পড়ে সুন্দর সাজানো গোছানো জয়নবের পৃথিবী । ছন্নছাড়া পাগলের মত হন্যে হয়ে বেঁচে থাকে জয়নব। মায়ের শোক যেনো কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারছিল না সে।
এমতাবস্থায় একদিন হঠাৎ করে বড় ভাইয়ের পরামর্শে জমি বিক্রি করে ভাগ্যের অন্বেষণে জয়নব ও হালিমা পাড়ি জমায় শহরে। জয়নব কাজ পায় একটা কার্টুন ফ্যাক্টরিতে আর হালিমা বাসা বাড়িতে। তাদের খুব সুন্দর চলছিলো সবকিছু। আর তার সাথে যুক্ত হয় আরও একটি নতুন মাত্রা। হালিমা মা হতে চলেছে।
আর তার সেই পৃথিবী ছাপিয়ে যাওয়া সুসংবাদ টা জয়নব কে দেয়ার জন্য হালিমা অপেক্ষা করছে জয়নবের জন্য।
জোৎস্নাশোভিত রাতের আকাশ ভেদ করে শূন্যে মিলিয়ে যাচ্ছে কুন্ডলী পাকানো ধোয়ায় বিবর্ণ আকাশ। সেই সাথে হালিমার অপেক্ষাটা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয় বিষাদ বাড়ির আঙ্গিনায়……
জীবনের এক জটিল স্রোতে ভেসে এসে আটকে যায় যায় হালিমা। বিষন্ন এক সন্ধ্যায় হঠাৎ করেই হালিমা বিষাদ বাড়ির আঙিনায় দেখতে পায় এক তরুণ কে।যে ঠায় দাঁড়িয়ে ভিজছে। পেছনে মেঠোপথ হতে দাঁড়িয়ে অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে একটা মেয়ে। আরলুশ বৃষ্টি মাখা এই সন্ধ্যায় কারা ছিলো তারা? জয়নব আর হালিমার সুখের আঙিনা-ই বা কেন বিষাদ বাড়িতে রুপ নিলো? হালিমার অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়েছিলো কি না? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে আপনাকে পড়তে হবে নাহিদ আহসান এর লিখা “বিষাদ বাড়ি” বইটি।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
গল্পের শুরু হয় আরশি নামক এক তরুণীর আত্মহত্যা দিয়ে।বইয়ের ঠিক শুরুতেই লেখক আপনার মাথায় একটি প্রশ্ন জাগিয়ে দিবে “কে এই আরশি?আরশি কেনো আত্মহত্যা করল?”
লেখক আপনার মস্তিষ্ক নিয়ে খেলবে এই গল্পে,আপনি জয়নব আর হালিমা গল্প পড়তে পড়তে আরশিকে খুজবেন বার বার।
বইয়ের প্রতিটি পরতে পরতে আপনি রোমাঞ্চিত হবেন,দুঃখ পাবেন,আপনি মাঝে মাঝে নিজেকে খুঁজে পাবেন। শহুরে এবং গ্রামীণ পরিবেশের স্বাদ পাবেন। এখানে আপনি পাবেন সমাজের প্রভাবশালী লোকদের ক্ষমতার অপব্যবহার, পাবেন অবন্তীর মতো মেয়েদের চাপা কষ্ট,পাবেন মেয়েদের মেনে নেয়া এবং মানিয়ে নিতে শিখা। জীবনের নানা জটিলতা লেখক অসাধারণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন এই বইয়ে।
নাইম
টিম_গীতাঞ্জলি_০৯
Leave a comment