বইয়ের নামঃ মাতাল হাওয়া
লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ
প্রকাশনীঃ অন্যপ্রকাশ
পৃষ্ঠাঃ ২৩২
মুদ্রিত মূল্যঃ ৫০০৳
প্রচ্ছদঃ মুর্তজা বশীরের শিরকর্ম ‘লেন বাই নাইট’ অবলম্বনে
🔴 প্রেক্ষাপট
বাংলার ইতিহাসে এক স্মরণীয় সময় রক্তাক্ত উনিশশো উনসত্তর। লেখক ঐতিহাসিক উনসত্তরের বিষয়গুলোকে ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ এর পাশাপাশি চরিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন।
🔴 পাঠপ্রতিক্রিয়া
“কাল রাত্তিরে যার পদরেখা
পড়েছে আমার নিঝুম স্বপ্ন-পথে
সে কি সক্ষম প্রলেপ বুলোতে
স্মৃতি-সঙ্কুল আমার পুরানো ক্ষতে?”
বিশেষ কোন সময় বা কাল ধরে লিখতে হলে লেখকদের ইতিহাসের দ্বারস্থ হতে হয়। লেখক ইতিহাসের দ্বারস্থ হয়েছেন। তবে তা গল্পের চাদরে। দুর্বোদ্ধ ইতিহাসকে গল্পের চাদরে ফুটিয়ে তুলেছেন। হুমায়ূন আহমেদ এর লেখালেখির হাতেখড়ি এই উনসত্তরেই। এই উনসত্তরেই আমাদের ঐতিহাসিক গনঅভ্যুত্থান, আসাদ নামের এক নক্ষত্রের পতন, মুক্তিযুদ্ধের পূর্বপ্রস্তুতি। সব মিলিয়ে সেই মাতাল সময় কে স্মরণীয় করে রাখতেই লেখকের এই বই টি “মাতাল হাওয়া”।
বইটির দুইটা পার্ট। একটা গল্পের আদলে নানান চরিত্র। আরেকটা লেখকের ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ। একটা আরেকটার সাথে মিশে আছে।
উপন্যাসটির মূল চরিত্র হাবীবুর রহমান। যিনি পেশায় একজন উকিল। তার মধ্যে মন্দের ভাগ যতটুকু ভালোর ভাগও তার কম নয়। তার মেয়ে নাদিয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। অত্যন্ত সুশ্রী। হার্টথ্রব🥰। তার শিক্ষক বিদ্যুৎ কান্তি দে। যিনি গল্পের একটা অংশ জুড়ে আছেন। হাবীবুর রহমানের সহোযোগী প্রণব কুমার। যিনি অত্যন্ত সাধু প্রকৃতির মানুষ। ফরিদ যিনি হাবীবুর রহমানের বাড়িতে আশ্রিত। যাকে হাবীবুর রহমান পরবর্তীতে কেস জেতার জন্য ব্যবহার করেন। হাজী সাহেব, হাবীবুর রহমান এর মক্কেল এবং হাজী সাহেবের ছেলে হাসান। অত্যন্ত সুপুরুষ, গম্ভীর ও বইপ্রেমী।
এছাড়াও পুরো গল্প জুড়ে আরো অন্যান্য চরিত্র বিদ্যমান।
আমার কাছে মনে হয়েছে যে গল্পটার থ্রিল ধরে রেখেছে সে হচ্ছে হাবীবুর রহমান এর মা হাজেরা বিবি। যিনি খুবই ইন্টারেস্টিং একটা চরিত্র। বয়োবৃদ্ধ মহিলারা যেমন হয়ে থাকে আরকি।
🔴 বইয়ের সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং পার্ট
লেখক গল্পের মধ্যে তার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কিছু স্মৃতিচারণ করেছেন। লেখক উনসত্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ১ম বর্ষের ছাত্র। এখানে ইন্টারেস্টিং পার্ট টা হলো, লেখক তার নিজের সত্য জীবন কথার সাথে গল্পের চরিত্র নাদিয়ার মাধ্যমে ক্রসওভার ঘটিয়েছেন। যা ছিল আমার কাছে বইয়ের সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং পার্ট।
এছাড়াও সমসাময়িক রাজনীতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক রাজনীতি, বিভিন্ন আন্দোলন, তৎকালীন গভর্নর মোনায়েম খান, আইয়ুব খান, বঙ্গবন্ধু, মাওলানা ভাসানী, আসাদুজ্জামান, তার ভাই মনিরুজ্জামান, হলের পরিস্থিতি ইত্যাদি সম্পর্কে কিছু তথ্যও তুলে ধরেছেন।
বইয়ের সমাপ্তি ছিল হৃদয়বিদারক। অজানা কল্পের সুশ্রী, গল্প পড়তে পড়তে যার প্রতি একটা মায়া এসে গিয়েছিল,🥰 নাদিয়া,❤️🔥 এন্ডিং এ নির্মমভাবে মারা যায়😢।
ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৯/১০
আমার প্রথম বুক রিভিউ। তো ভুল ত্রুটি হওয়া টাই স্বাভাবিক।
Leave a comment