Review by Sumaiya Aman Nitu
“যে জীবন দোয়েলের
মৌলী আখন্দ
বইয়ের নামেই আছে ‘জীবন’, গল্পও জীবনের। মোট দুটো গল্প নিয়ে বইটি। প্রথম গল্পটির নাম ‘এক ধরণের পরাজয়’ যেটা জেরিনের গল্প। জীবনযুদ্ধের কঠিন পথে বিশ্বাস নামক আলোকবাতি হাতে হাঁটতে হাঁটতে একসময় যখন সে আবিষ্কার করে বাতির তেল ফুরিয়ে গেছে, ভরসার টিমটিমে আলো নিভে যাওয়ার পথে, তখন সে ক্লান্ত বিধ্বস্ত অবস্থায় নিজেকে খুঁজে পায় এমন এক পরিস্থিতিতে, যেখান থেকে হয়তো আর বের হওয়া যায় না। সন্দেহপ্রবন, আত্মমগ্ন, স্বার্থপর স্বামী, আর ফেলে আসা মা বাবা বন্ধু বান্ধবের বাঁধনের মাঝে বরাবর স্বামীকে বেছে নেয়া জেরিন উপলব্ধি করে সে হেরে যাচ্ছে।
জেরিন কি সত্যি পরাজিত হবে? না কখনো তার ক্ষমতা হবে ফিরে আসার? তীব্র ভালোবাসার অবদান কি পুরোপুরি অগ্রাহ্য করা যায়?
দ্বিতীয় গল্প ‘যে জীবন দোয়েলের’। গল্পটি করোনাকালীন সময়ের প্রেক্ষাপটে রচিত। স্ট্রাগলিং ডাক্তার রিমন, যার ক্যারিয়ার গোছানোর সময়টা ভারি অগোছালো আর অনিশ্চিত। অনেক খুঁজেপেতে যে বাড়িটা সে ভাড়া নেয় সেখানের লোকগুলোও জীবনের সাথে লড়ে ক্লান্ত। মধ্যবিত্তের চলমান টানাপোড়েনের মাঝে চলছে সেই বাড়ির মেয়ে ত্রপার মেডিকেলের পড়াশোনা।
রিমনের পাশের ঘরে ভাড়া ওঠে আরেক দম্পতি মামুন-বুশরা। বড়লোকের মেয়ে বুশরা যে গায়ে হলুদের দিন পালিয়ে আসে দরিদ্র ঘরের বেকার ছেলে মামুনের কাছে। দু’জনার নতুন দাম্পত্যের খুনসুটি আর আত্মমর্যাদার সাথে অভাবের সংঘর্ষে চলতে থাকা দিনগুলো।
কাহিনী সংক্ষেপ পড়ে হয়তো ধারণা হবে খুব কষ্টের গল্প। পড়তে গেলে বুকের ভেতর এক ধরণের হাহাকার ঠিকই তৈরি হয়, তবে সেসব যেন আমাদের জীবন থেকে উঠে আসা গল্পই। এমন গল্প ছড়িয়ে থাকে চারপাশে। চোখ খুলে দেখা চাই শুধু। লেখকের হাতে সেই কাহিনীগুলোই জীবন্ত হয়ে উঠেছে মামুন, বুশরা, রিমন, ত্রপা, জেরিন বা নির্ঝর নামগুলোর মধ্যে দিয়ে।
গল্পগুলো আপনাকে আচমকা আসা কোনো ট্র্যাজেডির মতো ধাক্কা খাওয়াবে না, তবে ভাবাবে জীবন নিয়ে। ক্ষণজন্মা মানুষ্যজীবনের পাল্টে যাওয়া রূপ নিয়ে।
দুটো গল্পই খুব ভালো লেগেছে। সাবলীল লেখা একটানা পড়ে ফেলেছি। সমালোচনা বলতে এটুকুই, লেখক চাইলে আরও বিস্তারিত লিখতে পারতেন চরিত্রগুলো নিয়ে।”
সংযুক্ত সুন্দর ছবিটির কৃতজ্ঞতা বন্ধু Salma Supti
Leave a comment