শেষ : জুনায়েদ ইভান : Sesh By Zunayed Evan

  • বই : শেষ 
  • লেখক : জুনায়েদ ইভান
  • প্রকাশনী : কিংবদন্তী পাবলিকেশন 
  • প্রচ্ছদ : সঞ্চিতা সৃষ্টি 
  • রিভিউদাতা : Fayeja Sultana 

” শেষ ” বইটির নাম শুনলেই কেমন যেন কৌতূহল সৃষ্টি হয়। আগ্রহ জন্মে বইটি পড়তে। কি আছে এই বইটিতে যে শেষ দিয়ে শুরু হয়। এখানে শেষ দ্বারা কিসের শেষ বুঝিয়েছে কাউকে পাওয়ার নাকি হারানোর? এমন অনেক প্রশ্ন এসে যায়। প্রশ্ন গুলোর উত্তর যতক্ষণ জানা হয়নি ততক্ষণ মনের ভেতর প্রশ্ন ঘুরপাক করবেই। আর সব প্রশ্নের বিনাশ হবে শেষ বইটি পড়লেই। 
উৎসর্গঃ
লেখক জুনায়েদ ইভান “শেষ” বইটি ওনার বাবা কে উৎসর্গ করেছেন। তিনি উৎসর্গ টা প্রকাশ করেছেন ভিন্নরুপে। বাবার মহত্ত্ব দিয়ে তিনি প্রকাশ করেছেন এই ভালবাসা। লেখকের প্রকাশ টা ছিল এমন আমার বাবা সিংহের মতো না, সিংহের স্বভাব হলো সে যত শক্তিশালীই হোক না কেন, সব সময় পালানোর জন্য একটা জায়গা সে রাখে। আমার বাবা বট গাছের মতো। পড়ন্ত রোদের ছায়ার দরকার হলে আমি বট গাছের নিচে গিয়ে দাঁড়াই। রোদ যে এত সুন্দর সেটা ছায়ার ভেতরে থেকে না তাকালে বুঝতে পারতাম না। 
পৃথিবীর সকল বাবার সন্তানেরা যেন তাদের বাবাদের লেখকের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে। তাহলেই তো সকল বাবা বার্ধক্যে সুন্দর জীবন পাবে।

 লেখক পরিচিত

১৯৮৮ সালের আগস্ট মাসে লেখকের জন্ম। তার জন্ম হয়েছিল ভোরবেলায়। তখন চারদিক থেকে আজানের শব্দ ভেসে আসছে। এই ভোরবেলা মানে শান্ত, নির্মল হাওয়ার আবাস, থাকেনা এই সময়ে মানুষের মনে কোন হিংসা বিদ্বেষ, এই সময়ে সকল মানুষ খুব শান্ত থাকে। এদিক দিয়ে লেখককে একজন শান্তশিষ্ট মানুষ বলে আমরা মানতে পারি। তিনি এমবিএ করেছেন একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এখন সে একটা রক ব‍্যান্ডে গান গায়।
ফ‍্যামিলিতে, মা- বাবা, ছোট দুই বোন, ইশিতা আর অর্ণিমা। বতর্মানে তারা আমেরিকায় পড়ালেখা করছেন। লেখক বলছেন, একটা বার এক বইয়ের মলাটে লেখক পরিচিতি বয়ানে একটা লেখা পড়েছিলাম, অনেকটা এরকম, লেখকের কোনো বাড়ির ঠিকানা থাকে না। তার পরিচয় বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠায়। শব্দে – শব্দে, অক্ষরে – অক্ষরে। আমার কাছেও তাই মনে হয়। বইয়ের ভেতরে যে চরিত্র গুলো ভিন্ন ভিন্ন মতে একমত হন, লেখক এবং তার চরিত্র পৃথক সত্তা। 

বইয়ের কয়েকজন চরিত্র

  1. শিহাব
  2. হাসান
  3. নিতু
  4. রুদ্র 
  5. রফিক
  6. আনিকা
  7. আবিদা
  8. অজগর হোসেন
  9. রোবা আন্টি
  10. ইমতিয়াজ আঙ্কেল প্রমুখ।

 বইয়ের কথা

“শেষ” উপন‍্যাসটি শুরু হয় শিহাব আর হাসানকে দিয়ে। শিহাব একজন লেখক। মা বাবা মারা যাওয়ার পর একটা ম্যাসে থাকে। শিহাবের রুমমেট হাসান। হাসান চাই সে আত্মহত্যা করবে। প্রায় সময় সে আত্মহত্যা করার জন্য নিজেকে তৈরি করে কিন্তু বারবার ব্যর্থ হয়। শিহাবের লেখা ইদানীং আগাচ্ছে না। রফিক সাহেব শিহাবের বই প্রকাশক। তিনি বারবার তাড়া দেয় লেখা সম্পূর্ণ করার কিন্তু শিহাবের লেখা আগায় না। শিহাব ভাবে গল্প রেখে কবিতার বই বের করবে। কিন্তু সেখানেও সে ব্যর্থ হয়। কোন লেখায় তার মন মতো হচ্ছে না, বারবার লিখে আর বারবার লেখার কাগজ ছিড়ে আবার নতুন করে লিখে তবুও তার লেখা আর ঠিক হয়না। 
শিহাব মূলত হাসান কে নানান নির্দেশনা দেন কিভাবে সহজ পদ্ধতিতে আত্মহত্যা করা যায়। শিহাবের মনে হয় হাসানের আত্মহত্যা করা উচিত। বারবার ব্যার্থ হওয়াটা শিহাব মানতে পারেনা তাই নতুন নতুন পদ্ধতি শিখিয়ে দেয় কিন্তু হাসানের কোনো পদ্ধতি পছন্দ হয়না। একদিন শিহাব জানতে চায় হাসানের আত্মহত্যার কারণ। হাসান কারণ বলতে শুরু করে প্রেম দিয়ে। একটি ভুল স্টেশনে নিতুর সাথে দেখা। তারপর প্রেম। দুই বছর আগে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে নিতু। হারানোর কারণ জানতে চাইলে হাসান বলে, নিতুর জীবনে হাসান ছাড়াও রুদ্র নামের এক অতীত আছে। নিতুর প্রাক্তন স্বামী রুদ্র। 
তাদের প্রেম করে বিয়ে হয়। কিন্তু এক বছরের মাথায় রুদ্রর একটা অসুখ দেখা দেয়, ভুলে যাওয়ার অসুখ। সে এক পর্যায়ে বদ্ধ উন্মাদ হয়ে যায়। নিতুকেও চেনা মুশকিল হয়ে যায় রুদ্রর। নিতু এক পর্যায়ে রুদ্র কে একটা মেন্টাল এসাইলেম দিয়ে আসে এবং ডিভোর্স দেয়। নিতু আর হাসানের সম্পর্কের পর হঠাৎ একদিন রুদ্র সুস্থ হয়ে ফিরে আসে। নিতুর ঠিকানা জোগাড় করে নিতুর বাসায় যায়। সেখানে নিতু কে পেয়ে রুদ্র হাসানের হাতে একটা চিঠি ধরিয়ে দিয়ে বলে নিতু কে দিতে কিন্তু হাসান সেটা নিতুকে দেয় নি। 
আর সেটাই ছিল হাসান আর নিতুর বিচ্ছেদের কারণ। ভেঙে যায় হাসান নিতুর সম্পর্ক। সেই থেকে হাসান শিহাবের সাথে একই ম্যাসে থাকে। আর আত্মহত্যার চেষ্টা করে। শিহাব হাসানের গল্প শুনে ঠিক করে হাসানের গল্পকেই বই আকারে প্রকাশ করবে। তার লেখা বইকে সত্যতা দিতে সে হাসান কে আত্মহত্যার তাগিদ দেয়। আর বিভিন্ন পন্থা দেখিয়ে দেয়। 
ভালো লাগার কিছু উক্তিঃ
১) কেউ কারো জায়গা নিতে পারে না। একজনের শূন্যস্থান কখনো অন্যজন পূরণ করতে পারে না। শূন্যস্থানের নিচে যেমন দাগ থাকে, অন্তরেও থাকে।
২) মানুষ দুটো সময়ে চুপ করে থাকে যখন তার বলার কিছু থাকেনা আর যখন অনেক কথা থাকে কিন্তু মুখে বলতে পারেনা। 
৩) যতটা না যাওয়া, তার চেয়ে বেশি যেতে চাওয়া।
৪) দুটো মানুষের মাঝখানে একটা 
সেতু থাকে। আমরা হয়তো সেতুর দুরত্ব কমাতে পারবো,কিন্তু সেতুর অস্তিত্ব বাতিল করতে পারবো না। 
৫) মানুষ চেনা বড় শক্ত কাজ।
৬) সব চাইতে বড় কারাগার হলো আকাশ। এত বড় আকাশ যে পালানো যায় না। আর সব চাইতে ছোট কারাগার মানুষের মন। এত ছোট যে প্রবেশ করা যায়না।
৭) ঘৃণা সবসময় অসুন্দর হয়না। ভালবাসাও সবসময় সুন্দর হয়না।
৮) ভুল মানে ফেলে দেয়া না। ভুল মানে শুধরে নিয়ে সাথে রাখা।
৯) মিথ্যার চেয়েও ভয়ংকর হলো অর্ধেক সত্য।কারণ সেটাকে সত্য থেকে আলাদা করা যায় না। 
১০) যার কেউ নেই সে একা না,যে কারো না সে একা।
 মন্তব্যঃ
” শেষ” উপন‍্যাসটি লেখক জুনায়েদ ইভান বর্তমান সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সামাজিক বাস্তববাদী 
একটি উপন‍্যাস হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। উপন্যাসটির মধ্যে নিতু চরিত্র কে আমার একটি স্পষ্টবাদী চরিত্র লেগেছে। যে সবসময় স্পষ্ট ভাবে সব কথা বলে দেয়। শিহাব চরিত্র কে আশ্চর্য একটি চরিত্র মনে হয়েছে। যে নিজের লেখাকে বাস্তবতা দিতে বারংবার হাসানকে আত্মহত্যার তাগিদ দিয়ে গেছে। সব চরিত্রের উপস্থাপন পুরোপুরি মন কেড়েছে আমার। উপন্যাসটি পড়লে বুঝা যায় লেখক কতটা জ্ঞানী। তাহার লেখাতে স্পষ্ট হয় কতটা ইউনিক ওনার হাতের লেখা। “শেষ” উপন্যাসটি আমার হৃদয় কেড়েছে। আশা করি সকল পাঠকের মন জয় করবে এই বই। শেষ বইটি এক কথায় অসাধারণ থেকেও অসাধারণ। এমন একজব ইউনিক লেখকের ইউনিক লেখা পড়ে নিজেকে ধন্য মনে হলো।
“শেষ”-জুনায়েদ ইভান
এটি একটি সময়োপযোগী বাস্তববাদী উপন্যাস। প্রথমত এর আগে আমি কখনো বুক রিভিউ দেয়নি।তাছাড়া জুনায়েদ ইভান ভাইয়ার মতো একজন মানুষের বই পড়ে এবং সেইটা নিয়ে কিছু লিখবো তা ভাবতেই অবাক লাগে।যদিও তার বই রিভিউ করার কোনো যোগ্যতা আমি রাখি না তবে বই পড়ার কিছু মুহুর্ত শেয়ার করতে পারি। “শেষ” বইটা নিয়ে অনেক কিছু লিখার থাকলেও, কেন জানি সব কিছু গুছিয়ে লিখতে পারবোনা মনে হচ্ছে। বইটার সাথে একটা আশা পূরণ হওয়ার ব্যাপার আছে। ইভান ভাই সব দিক দিয়েই আমার কাছে প্রিয় একজন মানুষ।আগেই বলেছি তার কোন কিছুর বিষয়ে লিখবার ক্ষমতা কিংবা সাহস আমার নেই।তাও একটু চেষ্টা মাত্র।
“শেষ” উপন্যাসে তিনি বাবাকে উৎসর্গ করেছেন।যা আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছে। 
আজ প্রিয় মানুষের লেখা বইটি যখন পড়তে শুরু করি প্রথমত কৌতূহল ছিলো তবে কিছুক্ষন পড়ার পরে কোথায় যেন বার বার আটকে যাচ্ছিলাম তখন মাথা প্রায় উলোটপালোট হয়ে যাচ্ছিলো।প্রত্যেকটি লাইন শেষ করে দেখি তার পিছনে কিছু রহস্য লুকায়িত। তার উপর কিছু পৃষ্টা পড়ার পর আগের পৃষ্টাগুলো ভুলেই যাচ্ছিলাম।যদিও উপন্যাসের কাহীনিটা বুঝতে একটু সময় লাগছিলো।
হাসান সাহেবের দড়ির বদলে সন্ধ্যায় অ্যাকুরিয়াম নিয়ে ফিরে আসাটাই কেমন জানি একটা রহস্যময় ব্যাপার ছিলো।মনে মনে প্রশ্ন জাগতে শুরু করলো, কি মনে করে তিনি তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে নিলো মুহুর্তে?রহস্যে ঘেরা এই চারিপাশ। সেখানে বিচ্ছেদের সুরে পুড়ে ছারখার সোনালি সম্পর্কগুলো।নানা সম্পর্কের টানাপোড়ন ফুটে উঠেছে বেশির ভাগ।যেখানে কেউ কারো হতে পারেনি।তবে সবকিছুর সবদিক ভালো হবে না তাই স্বাভাবিক, আমার মতো অনেকেরই হয়তো লেখক শিহাব সাহেবের এই উদ্ভট চরিত্রটা ভালো লাগেনি।তার এইরকমের চরিত্রের পিছনে হয়তো তার অসুস্থ মস্তিষ্ক দায়ী।
তবে তার চরিত্রটা ছাড়া বাকি চরিত্রগুলো অসম্ভব ভালো ছিলো।সত্যি বলতে পুরো লেখাটাই একটা নতুনত্বের ছোঁয়া পেয়েছে।কিভাবে একটা গল্পের মধ্য থেকে অন্য একটি গল্পে কি সাবলীল ভাবে পদার্পণ করা যাই তা জুনায়েদ ইভান ভাই দেখিয়ে দিলেন।
তাছাড়া রবীঠাকুর,কবি শেলি, জীবন চট্রোপাধ্যায়ের কবিতা, লিওনার্দো কোহনের সেই বিখ্যাত গান যা মনে কাটা দেয়ার মতো ছিলো।তাদেন উপস্থিতি উপন্যাসকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
তারই সাথে কিছু উক্তি ও লাইন মনে ধরার মতো ছিলো।
 যেমন-
১!”নিজেকে বোঝার কিছু নেই,নিজেকে তৈরি করতে হয়”!
২!আমি কিভাবে ভালবাসব সেটা শুধুমাত্র আমি নির্ধারণ করি না,আমি যাকে ভালবাসি সেও নির্ধারণ করে!
৩!মানুষ চেনা বড়ো শক্ত কাজ!
৪!সকল মানসিক দুর্বলতার মধ্যে জীবনের প্রতি ভালোবাসা সবথেকে শক্তিশালী।
৫!মানুষ দুটো সময়ে চুপ থাকে যখন বলার কিছু থাকে না আর যখন অনেক কথা থাকে কিন্তু মুখে বলতে পারে না।
৬!যতটা যাওয়া, তার চেয়ে বেশি যাওয়া!
৭!পৃথিবীতে সবাই মরার জন্য আত্নহত্যা করে না, কেউ কেউ বাঁচার জন্য করে।কারন মানুষ মরতে পারে কিন্তু ভুলতে পারে না।
৮!” একা মানুষের কোন পিছুটান থাকে না, কথাটা আসলে ঠিক না। জীবনের প্রতি ভালোবাসা হলো সব চাইতে বড়ো পিছুটান। “
আরো অনেক কথা মনে ধরার মতো ছিলো সব লিখে ফেললে কারো পড়ার আগ্রহ থাকবে না।
এককথায় বললে অসাধারণ ছিলো Zunayed Evan ভাই।ভাই তোমার হাতটি সত্যিই শক্ত না হলে এমন ইউনিক শব্দ আর বাক্যের সংমিশ্রণে এমন একটি উপন্যাস কিভাবে আমাদেন উপহার দিতে পারলেন?
সময় ও সুযোগ হলে সবাই বইটি পড়ে নিয়েন।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?