আশা আকাঙ্ক্ষা : শংকর | Asha Akangkha By Shongkor

At A Glance Of Asha Akangkha

  • Title : আশা আকাঙ্ক্ষা
  • Author : শংকর
  • Country : Bangladesh
  • Language : Bangla
  • Number of Pages : 128
  • ISBN : 9789845060561

লেখকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

কত অজানারে, চৌরঙ্গী, জন-অরণ্যের মত সাড়া জাগানো বিখ্যাত উপন্যাসগুলোর – লেখক ‘শংকর‘ বা মণিশংকর ( ছদ্মনাম শংকর ) ১৯৩৩ সালের ০৭ই ডিসেম্বর ( বঙ্গাব্দ: ১৩৪১ সালের ২২শে অগ্রহায়ণ ) যশোরের বনগ্রামে জন্মগ্রহণ করলেও শৈশবের বেশিরভাগ ও কৈশোর কাটে কলকাতার হাওড়ায় । সংগ্রামী ও অদ্ভূত জীবনের অভিজ্ঞতায় যেন তাঁর লেখার উপজীব্য বরং, বলা ভালো অভিজ্ঞতাগুলো লেখাগুলোকে প্রাণ দেয় ।

At A Glance Too Of Of Asha Akangkha

  • বইয়ের জনরা: চিরায়ত উপন্যাস
  • প্রকাশনী: দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড ( ২০১০ সংস্করণ )
  • পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১২৮
  • প্রচ্ছদ: গৌতম রায়
  • মূল্য: ২০০ টাকা
  • নিজস্ব রেটিং: ৮.৫ / ১০

“বল বীর, বল বীর
বল উন্নত মম শির ।
শির নেহারি আমারি নত শির
ওই শিখর হীমাদ্রির ।”
-কাজী নজরুল ইসলাম

ভারতবর্ষ স্বাধীন হয়ে দু’যুগ এবং একটু বেশি মতন পেরিয়েছে । শংকর বাবু অর্থাৎ, লেখক তখনই যা বুঝেছিলেন এবং লেখেছিলেন তা এক চরম সত্য যা হয়তো আমাদের বুঝতে এখনও অনেক বছর লেগে যাবে । উপমহাদেশের প্রতিটি স্বাধীন রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে কথাটা খাটে সমানে সমানে । আমরা গোলাম ছিলাম তাই বলে কী পরনির্ভর হয়ে থাকব? শীর উঁচু করে আত্মনির্ভর হয়ে বাঁচতে আমাদের এত দ্বিধা এবং বাধা কেন? ভারতবর্ষের আত্মনির্ভর হওয়া মানুষের চোখে যেন বিদ্রুপের হাসি । তবে সেই বিদ্রুপের হাসিও যে হিসেব করে সময়ের নির্দিষ্ট গণ্ডির মাঝে হাসতে হয় তা কেউ জানত না ।

কমলেশ রায়চৌধুরী, সদ্য আইআইটি ( ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ) হতে ডক্টরেট করা কাজ পাগল এক আদর্শবান যুবক যাঁকে খপ করে ধরে এইচএসির ( হিন্দুস্থান এগ্রো ক্যামিক্যালস ) রিসার্চ ডিরেক্টর হিসেবে সদ্য পদোন্নতি প্রাপ্ত নোয়েল দিগম্বর বনার্জি তাঁর স্বপ্ন পূরণের ডার্বিতে ঘোড়ার বদলে লাগিয়েছেন বাজি । অগত্যা কমলেশকেও যোগদান করেত হল চন্দনপুরে এইচএসির গবেষণাগারে সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার হিসেবে । ধীরে ধীরে কাজের নেশায় মেতে ওঠা দিগম্বর শিষ্যরা স্বয়মধিগত বিদ্যেই দেশকে কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে জোরছে কাজ করছে । এরই মাঝে কমলেশ এক গুরু দায়িত্বের ভার নিজের কাঁধে চাপাতে বাধ্য হল । চন্দনপুর থেকে সোজা দরিয়াপুর তথা, পরিবর্তিত নাম কৃষিনগরে পদোন্নতি পেয়ে প্রোজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পেলেন । দিগম্বর বনার্জির নির্দেশ সাতই ডিসেম্বর কৃষিনগর কারখানা চালু করতে হবে আর অন্যদিকে কমলেশ তাঁর সর্বশেষ চেষ্টা অবধি করে যাচ্ছে । দিগম্বর বনার্জি তাঁকে চিনেয়েছি নতুন এক জগৎ, চাখিয়েছে নতুন এক সৃষ্টি এবং সাফল্যের উন্মাদনার অলীক পানীয় । দিগম্বর বনার্জির সাথে তাঁর বন্ধন অন্য এক কথা বলে এবং তাই তাঁর প্রাণ দিয়ে হলেও সে সাতই ডিসেম্বরই কারখানা চালু করবে ।

ইতোমধ্যে কমলেশ পরিচিত হয়েছে পার্সনাল সেক্রেটারি সুজাতা দাস, কৃষিনগর প্রোজেক্টের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার সুদর্শন সেন ছাড়াও বেশ কয়েকজন সহকর্মী যাঁরা কারখানা বসানোর কাজকে তড়ান্বিত করতে সচেষ্ট দিবানিশি হরদম । কর্মকুশল বিদিশি বাবুরা, যাঁরা জাপান ও জার্মান থেকে এসেছে তাঁদেরও অবাক করা অমানবিক পরিশ্রম যেন প্রেরণা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে । আবার, কমলেশের জীবনে একজন বিশেষ মানুষেরও আগমন ঘটেছে । চন্দ্রমল্লিকা চ্যাটার্জি, বিয়ের পর নামের পদবী পরিবর্তন করে রেখেছে রায়চৌধুরী । দুজনার মিষ্টি মধুর সম্পর্কের চেয়েও যেন কৃষিনগর প্রোজেক্টের কারখানা বড় কিছু । সবকিছু তবুও ঠিকঠাকই চলছিল কমলেশের জীবনে কিন্তু, হঠাৎই দিগম্বর বনার্জি কারখানা এক হপ্তা এগিয়ে দিতে বলেন যদিও সে কাজেও বেশ দারুণ অগ্রগতি ঘটেছিল এবং নির্দিষ্ট দিনের এক হপ্তা আগেই যে কারখানা চালু হবে এটাও ঠিক হয়ে গিয়েছিল কিন্তু, কী হল শেষে?

কমলেশ কি পেরেছিল দিগম্বর বনার্জির কথা রাখতে? কেনইবা ঘোষিত নির্দিষ্ট দিন থেকে এক হপ্তা এগিয়ে কারখানা চালুর ফের নির্দেশ দিলেন বনার্জি? কমলেশ-চন্দ্রমল্লিকার সম্পর্কের বন্ধন কি অটুট থাকবে? সুজাতা দাস, সুদর্শন সেন, বিদিশি বাবুরা কি পারবে কমলেশকে যুদ্ধে জয়ী করতে? দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আমি রাখব না আপনাদের বরং নিজেরাই একবার বইটি পড়ে দেখুন না শেষ পর্যন্ত কারখানায় কি সঠিক দিনে ইউরিয়া উৎপাদন চালু হয়েছিল? কমলেশ রায়চৌধুরী কি পেরেছিল এই গুরু দায়িত্বের ভার রক্ষা করতে?

বইয়ের কাহিনী ও অন্যান্য সমালোচনা

লেখক শংকর ‘আশা আকাঙ্ক্ষা‘ বইটি এক ছটুির দিনে বেড়াতে গিয়ে গন্তব্যস্থলে কিছু তরুণ বৈজ্ঞানিকের সাথে কাহিনীগুলো বাস্তব হতে আশ্রিত হয়ে তাঁর মস্তিষ্কে কল্পিত হলে পরে তা তিনি কাগজ ও কালিতে রচনা করেন । এখন আপনারা নিজেরাই বইটি পড়ে দেখুন তিনি কি আমার কথিত মর্যাদার যোগ্য অধিকারী নাকি নয় ।

আশা আকাঙ্ক্ষা বইটি যেই প্রকাশনী হতে প্রকাশিত তার অন্য বইগুলো পড়িনি আগে এইটিই প্রথম । বাঁধাই যথেষ্ট নয়, বলার মতন । বানান সম্পাদনা বেশি একটা জুতসই নয় । বইটির প্রচ্ছদ পশ্চিম বাংলার দে’জ পাবলিশিং-এর অনুরূপ তবুও প্রচ্ছদটি বটে কাহিনী, কল্পনা ও নামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ । বইটির মূল্যও তুলনামূলক বেশ কম বলাই বাহুল্য ।

বই হতে উদ্ধৃত কিছু পছন্দের উক্তি

* “সন্ধান করো তাকে নিশ্চয়ই খুঁজে পাবে ।”
– লে ব্লাঙ্ক

বেশি বেশি বই পড়তে তো কোনো বাঁধা নেই, বই ছুঁয়েই দেখুন না একবার ক্ষতি তো নেই । জ্ঞানের উৎস হোক বই 
__ মোঃ শাহরিয়ার খান,

কমলেশ রায়চৌধুরীর জীবনে একটু আগে যে অধ্যায় শুরু হয়েছে, সহজেই তার নামকরণ করা যায়: ‘ফুলশয্যার পরেই’। নবদম্পতির জীবনে সেই পরম আকাঙ্ক্ষিত, চরম রোমাঞ্চকর এবং বৈপ্লবিক অভিজ্ঞতার পর মাত্র কয়েক ঘণ্টা অতিবাহিত হয়েছে। এমন সময়ে সুখশয়নের নায়ককে একাকী হাওড়া স্টেশনে ট্রেনের কামরায় বসে থাকতে দেখার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না।
কিন্তু বত্রিশ বছরের সুদর্শন কমলেশ রায়চৌধুরী সত্যিই হাওড়া-চন্দনপুর এক্সপ্রেসের প্রথম শ্রেণীর কামরায় বসে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। গত রাত্রে নতুন অভিজ্ঞতার সমৃদ্ধ হওয়ার পরও তার মুখে তীব্র বিরক্তির রেখা ফুটে উঠেছে কেন?
সাধারণ বাঙালিদের তুলনায় কমলেশ একটু বেশি লম্বা। সুতপাদি সেবার ফোন করে জানতে চেয়েছিলেন, “ভাই, তোমার হাইট কত?”
কমলেশ ফোন ধরে বলেছিল, “বেশ মানুষ তো আপনি? একটা লোক কতখানি লম্বা জানবার জন্যে কলকাতা থেকে চন্দনপুরে ট্রাঙ্ক টেলিফোন করছেন।”
“আঃ কমলেশ, তুমি বড্ড কথা বাড়াতে পারো। জানোই তো মাত্র তিন মিনিট সময় ।
চটপট তোমার হাইট বলে ফেলো,” কলকাতা থেকে সুতপাদি অনুরোধ করেছিলেন। “আমার হাইট নিয়ে আপনার কি হবে?” কৌতূহলী কমলেশ একটু অবাক হয়েই প্রশ্ন করেছিল।
সুতপাদি এবার ট্রাঙ্ক কলের রহস্য ফাঁস করলেন, “একটি সুন্দরী মহিলার মাকে তোমার সম্পর্কে খবরাখবর দিতে হবে, বুঝলে শ্রীমান? মেয়েটির গোঁ, পুরুষমানুষ খুব লম্বা না হলে গলায় মালা দেবে না। ”
“লিখে নিন — ১.৮০ মিটার,” কমলেশ সুতপাদিকে বলেছিল।
“আঃ কমলেশ! আইসক্রিমের মতো ফর্সা মিষ্টি একটা কমবয়সী নরম মেয়ে সেন্টিমিটার থেকে কী করে ভাবী বর সম্বন্ধে আন্দাজ পাবে?” 
কমলেশ রসিকতা করেছিল, “তাহলে কিলোগ্রামে লিখে নিন — গতকালই ওজন নিয়েছি: ৬৬ কিলো । গজ-ফুট-ইঞ্চি মণ-সের-ছটাক এসব যে বাতিল হয়ে এখন মেট্রিক হিসেব চালু হয়েছে জানেনই তো।”
ফোনের ওপার থেকে সুতপাদি বলেছিলেন, “কিলোতে গিয়ে কী জিনিস হাতছাড়া করছো জানো না! পাত্রী ইতিহাসে এমএ পড়ে, অতশত অঙ্ক জানে না। তোমার হাইট কত বলো। পাঁচ ফুট এগারো ইঞ্চি?”
সুতপাদি ঠিক ধরেছেন। কমলেশ জানতে চাইলো, “আন্দাজ করলেন কেমন করে?” সুরসিকা সুতপাদি সঙ্গে-সঙ্গে উত্তর দিবেন, “কেন! আমার কর্তার পাশে ফেলে । উনি হচ্ছেন পাঁচ ফুট আট—তার থেকে ইঞ্চি তিনেক লম্বা তুমি।”
সুতপাদি চন্দনপুরে ফিরে আসবার পরে কমলেশ বলেছিল, “ধন্য আপনারা আজকালকার মেয়েরা! সে-যুগে মেয়েরা বিয়ের আগে তাদের স্বামীর নাম পর্যন্ত জানতো না, জিজ্ঞেস করবার সাহসও পেতো না। আর আজকালকার মেয়েরা ভাবী বরের নাড়ীনক্ষত্রের খবর নিচ্ছে। তাছাড়া বিয়ের পর আপনারা স্বামীদের বাড়তেও দিচ্ছেন না !”
“মানে?” সুতপাদি কপট রাগ দেখিয়ে কমলেশের অভিযোগের বিস্তারিত ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন।
শুভাশিসদাকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে কমলেশ বলেছিল, “বিয়ের আগেও দাদার যা উচ্চতা ছিল এখনও তাই রয়েছে— পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি।”
“তাতে মহাভারতের কী অশুদ্ধি হয়েছে শুনি?” তর্কে পারদর্শিনী সুতপাদি টিপয়ে
চা রাখতে-রাখতে দেবরসদৃশ কমলেশকে কোণঠাসা করবার চেষ্টা করলেন । কমলেশ চায়ের কাপে মুখ দিয়ে বলেছিল, “মাই ডিয়ার সুতপাদি, পুরাকালের ঋষিরা বলেছিলেন—শুয়ে থাকাটাই কলি, বসে থাকাটাই দ্বাপর, উঠে দাঁড়ানোই ত্রেতা
এবং চলাটাই হলো সত্যযুগ। আর আমাদের এই যুগে, ম্যানেজমেন্ট শাস্ত্রে বলছে….”
“রাখো তোমাদের ম্যানেজমেন্ট শাস্ত্র, ” সুতপাদি এবার কমলেশকে মিষ্টি মুখঝামটা দিলেন ।
“বেশ! পতিদেবতার মুখেই শুনুন, উনিও তো আজ দিগম্বর বনার্জির সেমিনার লেকচার সেবন করেছেন।”
শুভাশিসদা বললেন “আমাদের বলা হচ্ছে, গ্রোথ অর্থাৎ এই বাড়ন্ত ভাবটাই হলো জীবন। বাড় না থাকাটাই এক ধরনের মৃত্যু। প্রত্যেক কোম্পানিকে, এমনকি আমাদের এই ভারত সরকারি সংস্থা হিন্দুস্থান অ্যাগ্রো কেমিক্যালস লিমিটেডকে, স্রেফ বেঁচে থাকবার জন্যে প্রতি বছর অন্তত শতকরা দশভাগ বেড়ে যেতে হবে।”
কমলেশ হাসতে হাসতে মন্তব্য করেছিল, “ সুতপাদি, তার মানে শুভাশিসদাকেও বছরে শতকরা দশভাগ বাড়বার অনুপ্রেরণা দিতে হবে আপনাকে!”
“দিচ্ছি।” সুতপাদি নিজের নরম সুন্দর মুখ বেঁকিয়েছিলেন। স্বামীকে সাবধান করে দিয়েছিলেন, “অফিসে যত খুশি বাড়াবাড়ি করো; কিন্তু নিজের ওজন বাড়ালেই ডাইভোর্স।” 
ঘরোয়া আক্রমণে বিপর্যস্ত শুভাশিসদার পক্ষ নিয়ে কমলেশ টেবিলে আলতো টোকা মেরে প্রশ্ন তুলেছিল, “বিয়ের সঙ্গে ওজনের সম্পর্ক কী?”
প্রশ্নটার ওপর কোনোরকম গুরুত্ব না দিয়ে সুতপাদি মিটমিট করে হাসতে লাগলেন। এবং যার জন্যে লড়াই করা সেই শুভাশিসদা নির্লজ্জভাবে বউকে সাপোর্ট করলেন। কমলেশের অনভিজ্ঞতা যে ধরা পড়ে গিয়েছে তার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেছিলেন, “আছে আছে: দাম্পত্যজীবনের সঙ্গে নরনারীর ওজনের একটা নিবিড় সম্পর্কই আছে! এখনও আইবুড়ো রয়েছ, বিয়েশাদি হোক তখন বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে।”
শুভাশিসদার উত্তর শুনে অমন যে সপ্রতিভ সুতপাদি, তিনিও একটু লজ্জা পেয়েছিলেন। মুখের হাসি চেপে রেখে গম্ভীর ভাব করে তিনি অন্যদিকে তাকিয়েছিলেন, যেন কথাটা শুনতেই পাননি।
শুভাশিসদার শেষ কথাটাও এখন ট্রেনের কামরায় বসে কমলেশের মনে পড়ে যাচ্ছে। শুভাশিসদা বলেছিলেন, “আসলে, মেয়েরা সব সময় একটা মাঝামাঝি জিনিস চায়— কমও নয়, বেশিও নয়। খুব রোগা নয়, মোটাও নয়।”
শুভাশিসদা জিওলজির ছাত্র। কমলেশের সঙ্গে একই কলেজে পড়েছেন— কয়েক বছরের সিনিয়র। কিন্তু কলেজ হোস্টেল থেকেই কমলেশের সঙ্গে আলাপ ছিল। তারপর পাকে-চক্রে কর্মসূত্রে এই চন্দনপুরে দুজনের আবার দেখা হয়ে গেলো। ইতিমধ্যে কমলেশ এমটেক পাস করেছে; নামের সামনে একটা ‘ডক্টর’ যোগ হয়েছে। আর শুভাশিসদাও বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন পড়াশোনা করে দু-একটা বাড়তি ডিগ্রির রবার স্ট্যাম্প যোগাড়
করেছেন। শুভাশিসদা হিন্দুস্থান অ্যাগ্রো কেমিক্যালসে বেশ জাঁকিয়ে বসেছিলেন। শুভাশিস গৃহিণী সুতপা মজুমদার ব্যাচেলর কমলেশ রায়চৌধুরীকে প্রায়ই বাড়িতে নেমন্তন্ন করেন । দেবরসদৃশ কমলেশকে সুতপাদিই বলেছিলেন, “আর এইভাবে আইবুড়ো হয়ে কতদিন যেখানে-সেখানে ঘুরে বেড়াবে ভাই?”
সুতপাদির স্নেহপ্রশ্রয়ে কমলেশ খুব সহজ হয়ে যেতে পারে। সে হেসে বললো, “স্বীকার করছি আমি আইবুড়ো। কিন্তু ‘যেখানে-সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছি এমন বদনাম দিচ্ছেন কেন?”
কমলেশের প্রশ্নে মোটেই বিব্রত হলেন না আধুনিকা সুতপাদি। কমলেশের দিকে ডান হাতের আঙুল তুলে বললেন, “ব্যাচেলরদের আমি মোটেই বিশ্বাস করি না।”
কমলেশ নিজেকে নিরাপরাধ প্রমাণ করবার জন্যে বললো, “চরে খাবার সময় কোথায়, সুতপাদি? নিজের কাজকর্ম, নিজের ল্যাবরেটরি এবং নিজের ডিরেক্টর দিগম্বর বনার্জিকে নিয়েই তো মশগুল আছি!”
সুরসিকা সুতপাদি সঙ্গে-সঙ্গে মন্তব্য করেছিলেন, “ব্যস্ত হয়তো আছো কিন্তু মশগুল কিনা জানি না। সত্যেন দত্ত লিখেছিলেন: আমি চাই মধু মশগুল হাওয়া।”
“শুভাশিসদা, সত্যি আপনি গুছিয়ে নিতে জানেন: দেখে-শুনে খুঁজে পেতে বিয়ে করলেন বাংলায় এমএ সুতপাদিকে। কথায় কথায় মিষ্টি মিষ্টি কোটেশন পাচ্ছেন!” কমলেশের কথা শুনে মজুমদার দম্পতি অনেকক্ষণ ধরে হেসেছিলেন। তারপর সুতপাদি কোলের ওপর পড়ে যাওয়া আঁচলটা কাঁধে তুলে নিয়ে বলেছিলেন, “বাংলায় এমএ পাস-করা সুন্দরীরা এখনও এদেশে বিরল হয়ে ওঠেনি। প্রতি বছর শতখানেক করে বেরুচ্ছে কলকতা ইউনিভার্সিটি থেকে। তাছাড়াও আধডজন বিশ্ববিদ্যালয় আছে। একটু ইচ্ছে দেখালেই ঘটকীর ব্যবসায় নেমে যেতে পারি। এমএ পাস মেয়ের বাবারা এমন ছেলের খোঁজ পেলে আমরা বাড়ির সামনে লাইন দেবে।”
কমলেশ ব্যাপারটাকে এবারে হাল্কা করে দিয়েছিল। গম্ভীরভাবে বলেছিল, “ সুতপাদি, এটা মনে রাখবেন, আপনি সরকারি সংস্থায় একজন পদস্থ অফিসারের ওয়াইফ। এইচএসির বিনা অনুমতিতে সরকারি বাংলো থেকে প্রাইভেট ব্যবসা চালাতে পারেন না। ভিজিলেন্স ডিপার্টমেন্টে দাসাপ্পা আমার জানাশোনা । ”
“বেশ করবো, একশ বার করবো!” সুতপাদি আবার আঁচল সামলে নিলেন। বক্ষদেশের আৰু সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হয়ে তিনি বললেন, “আমি তো আর পয়সা রোজগারের জন্যে এ লাইনে নামছি না। নামছি পুণ্যের লোভে। আইবুড়ো ছেলেমেয়েদের ঘটকালি করলে স্বর্গলাভ হয়।”
মুখটিপে হেসে কমলেশ বললো, “যতই গলা ফাটিয়ে চিৎকার করুন, দাসাপ্পা জানে ঘটকালিটা আজকাল এদেশে একটি ভালো ব্যবসা – অনেকেই টু-পাইস করছে। আপনার অপরাধে দাদা কিন্তু বিপদে পড়ে যাবেন।”
নির্ভীক সুতপাদি তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বললেন, “তোমাদের তিনটে দাসাপ্পাকে বগলে পুরে রেখে আমি প্রজাপতির কাজ করবো।”
“শাস্তি না হয়ে দাসাপ্পার পক্ষে সেটা দুর্লভ সৌভাগ্যই হতো, কিন্তু বেচারাকে সে সুযোগ কোনোদিনই দিতে পারবেন না সুতপাদি। ভদ্রলোককে আপনি দেখেননি। অর্ডিনারি ওজন-মেশিনে উঠলে কাঁটা পুরো ঘুরে গিয়ে কল খারাপ হয়ে যায়। খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদ তো, তাই তিন মন ওজনের লোক দেওয়া হয়েছে!”
সুতপাদি এসব কথাতে মোটেই দমে যাননি। কমলেশকে বলেছিলেন, “বাজে কথা ছাড়ো। মেঘে মেঘে বয়স তো কম হলো না। এখন বিয়ে না করলে, কবে করবে? সোজা পথে না গেলে, শেষ পর্যন্ত কোনো খাণ্ডারনী প্রেমিকার ফাঁদে পড়বে, জীবনটা মিজারেবল করে ছেড়ে দেবে।”
সুতপাদির সেদিনের কথাগুলো এই মুহুর্তে ট্রেনের কামরাতেও কমলেশের মনে পড়ে যাচ্ছে। আর সেই সঙ্গে গতরাত্রের কথা। গত রাতটা সত্যিই কমলেশের বত্রিশ বছর ধরে গড়া জীবনটাকে মধুরভাবে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে।
কমলেশের কাছে এখন বিবাহের কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই। ডানহাতের মণিবন্ধে হলদে রঙের সুতোটা সে আগেই ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছে। পকেটে শুধু আছে একটা ছবি। এই ছবিটাও সুতপাদি একদিন কমলেশের কাছে চালান করেছিলেন। বম্বে ফটো স্টুডিওর মি. বোসের নিজের হাতে তোলা চন্দ্রমল্লিকার ছবি। মল্লিকার মুখের ওপর স্টুডিওর অনেকগুলো লাইট নানা কোণ থেকে পড়ে এক বিচিত্র আলো-আঁধারির সৃষ্টি করেছে। চন্দ্রমল্লিকাকে একটু বেশি ফর্সাই দেখাচ্ছে। ঠিক যেন চলচ্চিত্রের নায়িকা – যে-কোনো গল্পে নামিয়ে দেওয়া যায়।
ছবি দেখিয়ে সুতপাদি যখন কমলেশের মতামত জানতে চেয়েছিলেন তখন সে বলেছিল, “সিনেমার কাগজে ছাপিয়ে দিন। ডিরেক্টররা দেখলেই চান্স দেবে।” সেই শুনে সুতপাদি বলেছিলেন, “সিনেমা-থিয়েটার বুঝি না, তোমার জীবনের নায়িকা করে নাও— ঠকবে না। ”
কমলেশ মুচকি হেসেছিল। সুতপাদি বলেছিলেন, “ভারি মিষ্টি মেয়ে। যেমন নরম লক্ষ্মীমন্ত গড়ন, তেমনি হরিণ চোখের দুষ্টুমি। যদি একবার ধরা পড়ে যাও সারাজীবন নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাবে!”
“ওরে বাবা ছেলেরা কি গোরু নাকি?” কমলেশ কপট উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। “অন্যের কথা জানি না, তবে তুমি একটি গোরু; এইরকম এক উদ্ভিন্নযৌবনা সুন্দরীর ছবি হাতে তুলে দিলাম, বিয়ে করো না কারো, কিছুক্ষণ খুঁটিয়ে দেখবে তো? তা নয়, একবার দায়সারাভাবে তাকিয়ে খামের মধ্যে পুরে টেবিলে রেখে দিলে,” সুতপাদি সোজাসুজি কমলেশকে শুনিয়ে দিয়েছিলেন।
“আহা! করো কি করো কি! আমার কলেজতুতো ভাই এবং সহকর্মীকে খলনুড়িতে ফেলে এমনভাবে মারছো কেন?” শুভাশিসদা সেসময় অফিস থেকে ফিরে এসছিলেন। গিন্নির বক্তব্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়েও শুভাশিসদা কিন্তু কমলেশের পক্ষ অবলম্বন করেছিলেন। বলেছিলেন, “হাজার হোক আমরা সরকারি কোম্পানিতে দায়িত্বপূর্ণ পদে রয়েছি—আমাদের প্রেস্টিজবোধ আছে। স্বয়ং নূরজাহানের সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাব হলেও আমরা হ্যাংলার মতো হুমড়ি খেয়ে পড়তে পারি না।”
“বটে!” স্বামীর দিকে তির্যক দৃষ্টিপাত করে সুতপাদি কপট রাগ দেখালেন। শুভাশিসদা বললেন, “বেচারাকে একটু সময় দাও। ছবিটা সঙ্গে নিয়ে যেতে অনুরোধ করো। নিজের ঘরে গিয়ে, একান্তে আলো জ্বালিয়ে প্রয়োজন হলে একশ’বার দেখবে, যেমন তোমার ছবিটা আমি দেখেছিলাম…”
সুতপাদির উপরের ঠোঁটে ডানদিকে একটা কালো বিউটি স্পট আছে। রাগ দেখিয়ে মুখ কুঞ্চিত করলে তিলটা স্থানচ্যুত হয়ে ভারি সুন্দর দেখায়। সুতপাদি সেইভাবেই বললেন, “কলকাতার ছেলেদের মানসিক স্বাস্থ্য দেখছি মোটেই ভালো নয়।”
“তুমি ইউ পির বাঙালি — সুযোগ পেলেই পশ্চিমবঙ্গবাসীদের গালাগালি দাও কিন্তু কেন মিথ্যে বলবো, তোমার ছবিখানা আমি প্রথম দিনে সাড়ে-একাশিবার দেখেছিলাম।” “সাড়ে কেন?” সহাস্য কমলেশ জানতে চেয়েছিল।
শুভাশিসদা বলেছিলেন, “একমাত্র কারণ, আলেখ্যদর্শনের সময় মা বিনা নোটিশে আচমকা ঘরে ঢুকে পড়েছিলেন। আমিও ক্রিকেট খেলোয়াড় — ঝটিতি মালমসলা বালিশের তলায় থ্রো করেছিলাম।” 
“তারপর?” সুতপাদিকে বিব্রত করার উপাদান পেয়ে কমলেশ বেশ উৎসাহিত হয়ে উঠলো ।
শুভাশিসদা গম্ভীরভাবে বলেছিলেন, “মা ব্যাপারটা কিছুই বুঝতে পারলেন না। ভাবলেন আমি অফিস থেকে ফিরে ক্লান্ত হয়ে শুয়ে আছি। নিশ্চয়ই মেয়ে পছন্দ হয়নি। তখন মা বললেন, খোকা, তুই আর বাধা দিস না! মেয়েটি হিন্দুস্থানী হলেও বেশ ভালো। লক্ষ্মী সোনা আমার, তুই রাজি হয়ে যা। আমি বললাম, এখন জ্বালাতন কোরো না, একটু ভেবে দেখি। মা তখন ফটোখানা ফেরত চেয়ে বিপদে ফেলে দিলেন! বললাম, কোথায় রেখেছি খুঁজে দেখতে হবে। মা তবুও নাছোড়বান্দা। তখন মোক্ষম দাওয়াই দিলাম, মা একটু পরে এসো। ভীষণ মাথা ধরেছে।”
সুতপাদি সঙ্গে-সঙ্গে স্বামীকে মধুর মুখ ঝামটা দিলেন, “রাখো রাখো। পুরুষ-মানুষের ভালোবাসা মোল্লার মুরগী পোষা ! এখন তো মুখ ফিরে তাকিয়েও দেখোনা।
দাম্পত্য কলহ যাতে আর না বাড়ে সেই উদ্দেশ্যে শুভাশিসদা এবার টেবিল থেকে ছবির খামটা তুলে দিলেন। তারপর খুঁটিয়ে মেয়েটির ছবি দেখলেন। মন্ত্রবৎ কাজ হলো। স্বামীর ওপর মুহূর্তের মধ্যে প্রসন্না হয়ে উঠলেন সুন্দরী সুতপাদি। একগাল হেসে বললেন, “তুমি তো চন্দ্রমল্লিকাকে আগে দেখোনি। কেমন মনে হচ্ছে? শিষ্যকে একটু সৎপরামর্শ দাও।” শুভাশিসদার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। “যদি ফ্র্যাংক ওপিনিয়ন চাও, তাহলে সোজাসুজি বলবো: কোকাকোলা ।”
শুভাশিসদার মন্তব্য শুনে দুজনেই মাথায় হাত দিয়ে বসলো। সন্দিগ্ধ সুতপাদি এবার স্বামীকে সাবধান করে দিলেন, “আমার আত্মীয়-স্বজন নিয়ে তোমাদের কারখানার সস্তা রসিকতা চলবে না, একথা আগে থেকেই বলে রাখছি কিন্তু।”
আত্মরক্ষায় তৎপর শুভাশিসদা বললেন, “সস্তা সমালোচনা হলো? এতো বড় প্রশংসা করলাম। পড়োনি বিজ্ঞাপন: Things go well with Coke — সোজা বাংলা করলে যার মানে: জমে ভালো কোকাকোলা থাকলে!” এবার কমলেশের দিকে চোখ ফিরিয়ে শুভাশিসদা বললেন, “বুঝলে ব্রাদার! ওয়াইফের দূরসম্পর্কের আত্মীয় বলে নয়— নামটা একটু জবড়জং হলেও, এ-মেয়ের সঙ্গে জমবে ভালো।”
সুতপাদি কয়েদিন পরে আবার টেলিফোনে খবরাখবর নিয়েছিলেন। “কী হলো কমলেশ? ছবি দেখে এমন ঘাবড়ে গেলে যে আর দাদার বাড়িমুখো হচ্ছো না?”
কমলেশ বলেছিল, “উঃ সুতপাদি, আর বলবেন না। কর্তা একবারে ভাবের ঘোরে রয়েছেন। কাজ—কাজ ছাড়া ক’দিন কিছুই বুঝছেন না। এতোই তো বশীকরণ মন্ত্র জানেন, বুড়ো এন ডি বনার্জির একটা বিহিত করতে পারেন না?”
এইচএসির ডিরেক্টর নোয়েল দিগম্বর বনার্জিকে সুতপাদি যে একেবারেই পছন্দ করেন না, তা কমলেশের অজানা নয়। সুতপাদি গম্ভীর হয়ে বললেন, “হিন্দুস্থান সার কোম্পানি সমস্ত ভারতবর্ষ খুঁজে খুঁজে আর লোক পেলো না— কোথা থেকে যে খেংরাগুঁফোকে এসে চন্দনপুরে বসালো। রসকষ একটুও নেই।”
কমলেশ বলেছিল, “রস না থাকুক কষের যে অভাব নেই এ-কথা আপিসের লোকেরা হাড়ে হাড়ে জানে, সুতপাদি।” সুতপাদি বললেন, “তোমাদের অফিসের কথা থাক। চন্দনপুরে দিনরাত অফিস কীর্তন শুনতে-শুনতে কান পচে গেলো। তুমি ‘কোকাকোলা’র কী করলে বলো ?”
কমলেশ সলজ্জভাবে মন্তব্য করেছিল, “মহিলাটি কোকাকোলার মতোই বরফ-ঠাণ্ডা
নয়তো?”
বউদিরা অন্যদিকে যতই স্নেহশীলা হোক, প্রেমের দৌত্যে অনেক সময় তারা নিষ্ঠুর হতে দ্বিধা করে না। না হলে, এই বরফ-ঠাণ্ডার ব্যাপারটা কেউ সোজাসুজি অপর পক্ষের কানে তুলে দেয়?
কলকাতায় কয়েকদিন ছুটিতে এসেছিল কমলেশ। সেই সময় সুতপাদি সুযোগ বুঝে হাজির হয়েছিলেন। সুতপাদির আগ্রহেই চন্দ্রমল্লিকার সঙ্গে কমলেশের সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা হয়েছিল। প্রথমে মেট্রো সিনেমা, তারপর পার্ক স্ট্রিটে কোয়ালিটি রেস্তোরাঁয়। সঙ্গে সুতপাদি ছাড়া আর কেউ ছিল না। সুতপাদিও ভাষায়, এর নাম কন্ট্রোলড প্রণয়!
চন্দ্রমল্লিকা সেদিন কী সুন্দর সেজেছিল। সাজ-সাজ ভাব নেই, অথচ সাজ। আমাদের শিক্ষিতা আধুনিকারা এই আর্ট আজকাল বেশ আয়ত্তে এনেছে। দেখানোর ব্যস্ততা নেই; অথচ আমার যে সবই আছে এই আত্মবিশ্বাস ছড়িয়ে আছে চন্দ্রমল্লিকার দেহে মুখে ভঙ্গিতে চলনে বলনে।
সুতপাদি বলেছিলেন, “তোমাদের আলাপ করিয়ে দিই। এই হলো আমার পিসতুতো দিদির ছোট মেয়ে চন্দ্রমল্লিকা চ্যাটার্জি — ওরফে মল্লিকা — ওরফে ঝুমঝুমি। জন্ম এলাহাবাদে, প্রথমজীবন কেটেছে বোম্বাইতে; তারপর বাবার চাকরির সঙ্গে বদলি হয়ে এসেছে কলকাতায়। কনভেন্ট শিক্ষিতা বলতে পারো – কারণ ডায়োসেশানের ছাত্রী। তারপর আশুতোষ থেকে বিএ ‘হস্’ হয়ে এখন কলেজ স্ট্রিট থেকে এমএ পরীক্ষা দিয়েছে। রেজাল্ট বেরোয়নি, পরীক্ষা কেন্দ্রে টোকাটুকি করে কোনো বিপত্তি বাধিয়ে এসেছে কিনা জানা নেই!”
“আঃ মাসি,” চন্দ্রমল্লিকা চাপা রাগ প্রকাশ করে সুতপাদিকে আয়ত্তে আনবার চেষ্টা
করেছিল।
সুতপাদি বলেছিলেন, “ইনি কমলেশ রায়চৌধুরী। আমাদের প্রোজেক্টের নামকরা বৈজ্ঞানিক। সারকেই জীবনের সারসত্য বলে মেনেছেন। আইআইটির এমএসসিটেক। তারপর পাগলা দিগম্বরের নেকনজরে পড়ে মহামান্য ভারত সরকার পরিচালিত হিন্দুস্থান অ্যাগ্রো-কেমিক্যালসে দ্রুত উন্নতি করেছেন। সায়েন্টিস্ট সম্বন্ধে অনেক ইংরেজি নভেল পড়েছ নিশ্চয়, কিন্তু বৈজ্ঞানিক চোখে দেখেছ কি না জানি না; তাই আলাপ করিয়ে দিলুম।”
“দেশে হাজার হাজার বৈজ্ঞানিক রয়েছেন, দেখবার কী আছে?” এই বলে কমলেশ হাত তুলে নমস্কার করেছিল চন্দ্রমল্লিকাকে। একটু ঘাবড়ে গিয়েছিল চন্দ্রমল্লিকা। কিন্তু দ্রুত সাহস সঞ্চয় করে কমলেশকে একটা পরিচ্ছন্ন প্রতিনমস্কার জানিয়েছিল। 
  • |আশা আকাঙ্ক্ষা বইটি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে অনুগ্রহ করে বইটির অরিজিনাল কপি সংগ্রহ করুন। – Collect Now
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?