ইলম ও আলেমগণের মর্যাদা | আল্লামা ইবনুল কায়্যিম জাওযিয়্যাহ রহ

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ বলেন ‘মানুষ পানাহারের চেয়েও ইলমের প্রতি বেশি মুখাপেক্ষী। কারণ, দিনে এক দু’বার খাদ্য ও পানীয়ের প্রয়োজন হয়। আর ইলমের প্রয়োজন হয় সব সময়।

  • ইলম ও আলেমগণের মর্যাদা
  • লেখক : আল্লামা ইবনুল কায়্যিম জাওযিয়্যাহ রহ
  • প্রকাশনী : দারুত তাজকিয়া
  • বিষয় : ইসলামী জ্ঞান চর্চা
  • অনুবাদক : ড. হাফেয আবুল বারাকাত মুহাম্মদ হিজবুল্লাহ
  • পৃষ্ঠা : 460, কভার : হার্ড কভার
  • ভাষা : বাংলা

আলেমগণের মর্যাদা

আলেমগণের মর্যাদা বর্ণনায় ইমাম কাজবিনি বলেন,.. وكرامتهم عظيمة، اعلم أن درجة العلماء من أ ولحومهم مسمومة، من شمها مرض، ومن أكلها سقم، وأوصيكم معشر الناس والملوك بالعلماء خيرا، فمن عظمهم فقد عظم الله سبحانه وتعالى ورسوله، ومن أهانهم فقد أهان الله تعالى ورسوله، أولئك ورثة الانبياء وصفوة الأولياء شجرة طيبة : أصلها ثابت وفرعها في السماء.

অর্থ্যাৎ, জেনে রাখ, উম্মতে মুহাম্মদির মধ্যে আলেমগণের মর্যাদা ও সম্মান মহান। তাঁদের রক্ত বিষাক্ত। যে এ গোস্তের ঘ্রাণ নিবে সে অসুস্থ । যে তা ভক্ষণ করবে সে পূর্ণ অসুস্থ । আমি মানবমণ্ডলি ও রাষ্ট্রনায়কদেরকে ওলামায়ে কেরামের সাথে উত্তম ব্যবহারের অসিয়ত করছি। যে তাঁদেরকে সম্মান করবে সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সম্মান করবে। যে তাঁদেরকে অপমান ও তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করবে সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অপমান করবে। এরা রাসূলের ওয়ারিশ ও অলিদের শ্রেষ্ঠ দল, যাদের শাজারা তথা সিলসিলা পবিত্র। কুরআনের ভাষায়: তাদের মূল সুদৃঢ় ও শাখা আকাশে স্থাপিত।

উৎসঃ [কাজবিনি, মুফিদুল উলূম, হুকুকুল উলামা অধ্যায়]শায়খ আবদুল আযিয বিন মুহাম্মদ বিন আবদুলাহ সাদহান, মানজিলাতুল ওলামা, দারুল আসেমা, রিয়াদ, সৌদিআরব, সংস্করণ: প্রথম, পৃষ্ঠা: ১০]

অনুবাদকের অনুভূতি

ইমাম ইবনু কায়্যিম আল-জাওযিয়্যাহ (৭৫১-৬৯১ হিজরি) বহুল পরিচিত একটি নাম। বহু গ্রন্থ প্রণেতা ক্ষণজন্মা এ মনীষী তার লিখনির মাধ্যমে অমর হয়ে আছেন। প্রিয় মুফতি মুহাম্মদ আমিমুল ইহসান [জাযাহুল্লাহু খাইরান] তাঁরই একটি কিতাব ‘ফাযলুল ইলমি ওয়াল উলামা’-র সন্ধান দেন এবং অনুবাদের অনুরোধ করে কিতাবটি বাসার ঠিকানায় পাঠিয়ে দেন। কিতাবটি হাতে নিয়ে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু পাঠের সুযোগ হয় এবং যতই পড়তে থাকি ততই কিতাবটি অনুবাদের প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভব করতে থাকি। অনুবাদটি প্রকাশনার দায়িত্বও তিনি গ্রহণ করেন। এতে হিম্মতও বেড়ে যায় অনেকটা।

একসময় আল্লাহর নামে অনুবাদের সূচনা করি । ইতঃপূর্বেও অনুবাদের কাজ করেছি। বিধায় ভালোই জানা আছে যে, অনুবাদ শিল্প খুব সহজ নয়। তাই বহু চড়াই উৎরাই এবং বেশ কিছু বাধা অতিক্রম করে অবশেষে কিতাবটির অনুবাদ সম্পন্ন করতে সক্ষম হই । আলহামদু লিল্লাহ ।কিতাবটি অধ্যয়নে পাঠক ইলম পরিচিতি, ইলম অর্জনের গুরুত্ব, কুরআন ও সুন্নাহর সাথে ইলমের সম্পর্ক, ইলম তালিবে ইলম ও আলেমগণের মর্যাদা, কতদিন পর্যন্ত ইলম অর্জন করতে হবে, ইলমের ফযিলত সম্পর্কে মু’আয ইবনে জাবাল ও আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুমার বক্তব্য ও ওসিয়াত, নফল ইবাদত উত্তম নাকি ইলম অর্জন উত্তম, কোনটির মর্যাদা বেশী আলেমের কালি নাকি শহিদের রক্ত, আলেমগণের দায়িত্ব ও কর্তব্য কী, হিদায়াত ও ইলম গ্রহণে মানুষের বিভিন্ন শ্রেণী, ইলম অর্জনের বিভিন্ন মাধ্যম, ইলম ও মা’রিফাত এক না ভিন্ন, ইলম ও আমলের পারষ্পরিক সম্পর্ক, ইলমের নূর ও অজ্ঞতা অন্ধকার এবং দুনিয়াদার আলেম পরিচিতি ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারবেন।

আসলে কিতাবটি পাঠ না করলে এর গুরুত্ব অনুধাবন রীতিমত অসম্ভব। কিতাবটি যতই পড়েছি ততই ইলমের নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। বিস্ময়কর তথ্যাদি রয়েছে কিতাবটিতে। কিতাবটি অধ্যয়ন করলে ইলম ও আলেমগণের যথাযথ ফযিলত বুঝে আসবে। সেই ইলম অর্জনে নবী হয়েও মূসা আলাইহিস সালাম খাযিরের সান্নিধ্য লাভ করেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস তালাবা উলামা এমনকি সাধারণ পাঠকও কিতাবটি পাঠে ইলমের প্রতি বহুগুণে আগ্রহী হবেন ।

আমি ভুলের উর্ধ্বে নই । তাই অনুবাদে কোথাও ভুল পরিলক্ষিত হলে জানালে সংশোধনের নিশ্চয়তা রইল। আল্লাহ আমাদের এ ক্ষুদ্র আমলকে নাজাতের উসিলা বানিয়ে দিন এবং সাদাকায়ে জারিয়া হিসেবে কবুল করুন। প্রকাশকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে উত্তম জাযা দান করুন।

আল্লাহর রহমতের ভিখারী,

ড. হাফেজ আবুল বারাকাত মুহাম্মদ হিজবুল্লাহ

অধ্যাপক, আল-কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ 

কিছু কথা

আলহামদুলিলাহ। সমস্ত প্রশংসা সেই মহান রাব্বুল আলামিনের যিনি আমাদেরকে ইলম ও আহলে ইলমদের সাথে যুক্ত থাকার তাওফিক দান করেছেন। এ শুধু আল্লাহ তাআলার অশেষ মেহেরবানি। মহান আল্লাহ যাকে পছন্দ করেন তাকেই ইলমের ধারক ও বাহক নির্বাচন করেন। হজের সফরে এগার জিলহজ জামারাত সন্নিকটে এক মসজিদের পরিত্যক্ত গ্রন্থাদি হতে “ফযলুল ইলমি ওয়াল ওলামা” নামক এ গ্রন্থটি সংগ্রহ করি । যা ইবনু কায়্যিমিল জাওজিয়্যাহর ইলম বিষয়ে রচিত এক যাদুমাখা গ্রন্থ । ইলম ও আলেমদের মর্যাদা বিষয়ে এমন জামে আরবি গ্রন্থ আমার নজরে আর দ্বিতীয়টি পড়েনি। এ গ্রন্থটি ইহতিমামের সাথে মুতালাআ করতে থাকি এবং বিষয়বস্তু অধ্যয়নে ইবনুল কায়্যিমের প্রতি আমার মুগ্ধতা আরো বাড়তে থাকে। অনেকে মুতালাআর জন্য নিতে চাইলেও আমি ইহতিরামের সাথে বারণ করি । এ পুস্তকটিতে ইলম, আলেমগণের মর্যাদা ও ইলম সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো কুরআন, সুন্নাহ ও সালাফে সালেহিনের বর্ণনালোকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আমি গ্রন্থটির বিভিন্ন অংশ অনুবাদ করতে থাকি । নানা ব্যস্ততায় আমার পক্ষে এর অনুবাদ সমাপ্ত করা কঠিন হয়ে যায়। ইলম ও আলেমগণের মর্যাদা বিষয়ে ইবনুল কায়্যিমের প্রামাণ্য উপস্থাপনাগুলো আমাকে বিমোহিত করে।

ইতিমধ্যে একদিন শ্রদ্ধেয় শায়খ বিশিষ্ট আরবি ভাষাবিদ প্রফেসর ড. হাফেজ আবুল বারাকাত হিজবুল্লাহ মহোদয়কে এ গ্রন্থটি ভাষান্তর করার অনুরোধ করলে তিনি সম্মতি প্রকাশ করেন। এ গ্রন্থের অনুবাদ তাঁর মত মহান শায়খ করবেন।

ভেবেই আমি খুশিতে আহলাদিত হই। আমি গ্রন্থটি ফটোকপি করে তাঁর ঠিকানায় পাঠাই। তিনি খুব অল্প সময়ে মনযোগ দিয়ে তাঁর মেধা ও শ্রম ব্যয় করে অনুবাদ সম্পন্ন করেন। মহান আল্লাহ তাঁকে সুস্থতার নিয়ামত দান করেন ও তাঁর ছায়াকে উম্মাহর খেদমতে দীর্ঘ করেনএই গ্রন্থটি “ইলম ও আলেমগণের মর্যাদা” নামে দারুত তাজকিয়া হতে বিলম্বে হলেও প্রকাশ করতে পেরে আমরা মহান রবের দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি।

আশা করি ইলম ও আলেমগণের মর্যাদা বিষয়ে এমন একটি বাংলা অনুবাদকৃত গ্রন্থের জন্য সর্বস্তরের মুসলিমদের অপেক্ষার পালা এবার শেষ হবে ইনশা-আলাহইলমে দ্বীনের ছাত্র, শিক্ষক, পৃষ্ঠপোষক, শুভাকাঙ্খী ও অভিভাবক সকলে এ গ্রন্থ হতে উপকৃত হবেন। ইলম পিপাসুগণ এ গ্রন্থটিকে হাতের কাছে রাখবে বারবার পড়বে ইলমে নাফে লাভ করার চেষ্টা করবে। কুরআন সুন্নাহ ও আসলাফের দেয়া পথ ও মত আলোকে ইবনুল কায়্যিম প্রদত্ত নির্দেশনাগুলো বাস্তব জীবনে প্রতিপালন করার চেষ্টা করবে ।

ইলম ও আমলহীন জীবন পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট। মহান আল্লাহ বন্দি আলেমগণের মুক্তির ব্যবস্থা করেন। আলেমগণকে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা প্রদানে আমাদেরকে সচেষ্ট হওয়ার তাওফিক দান করেন। মহান আল্লাহ লেখক, সংকলক, অনুবাদক, সম্পাদক, পাঠকসহ সর্বস্তরের মুসলিমকে ইলমে নাকে দান করেন । আমিন ।

drhezbullah@gmail.com

Leave a Reply 0

Your email address will not be published. Required fields are marked *