কে তিনি – মুফতি মুহাম্মদ বিন-ইয়ামিন

প্রতিটি সাহিত্যপ্রেমি মানুষের কাছে এমন কিছু বই থাকে যার তুলনা হয় কেবল সেই বইটাই। আমি সাহিত্যপ্রেমি নই তবে আজ বলতে চাই এমন একটি বইয়ের কথা তার তুলনা শুধু সেই বইটাই। আল্লাহ সেই লেখককে উত্তম বারাকাহ্ দান করেন। 
🍁বই পরিচিতি🍁
  • বইঃ- “কে তিনি”
  • লেখকঃ- মুফতি মুহাম্মদ বিন-ইয়ামিন
  • প্রকাশনায়ঃ- প্রয়াস প্রকাশন – Proyas Prokashon 
  • প্রচ্চদঃ- মোহারের মুহাম্মদ 
  • পৃষ্টাঃ- ১৭৪
  • মূল্যঃ- ২৩৫ টাকা
” কে তিনি” নামটা কেমন অদ্ভুত তাই না। এটি আল্লাহ্ তায়ালার পরিচয় সম্পর্কে এক অসামান্য আলোচনাগ্রন্থ। “কে তিনি” নামটা কারো অজানা থাকার কথা নয়। খুব আল্প সময়েই সারাদেশে সাড়া জাগানো গ্রন্থ হচ্ছে “কে তিনি”। সবার মুখে মুখে এই বইটির প্রশংসায় রীতিমতো জোয়ার বইছে। অসম্ভব এই সুন্দর বইটি লিখেছেন বর্তমানে একজন বিশেষ লেখক। 
🍁সূচিপত্র🍁
১/ জানো কে তিনি? ২/ আকাশে আছে আলো। ৩/ চাঁদের আলো। ৪/ মহাশূন্যে মহাবিশ্ব। ৫/ সৌরজগৎ। ৬/ আজব এক সারা কারাখানা। ৭/ বিজ্ঞান: রহস্যময় ধোঁয়া। ৮/ তিনি আল্লহ্। ৯/ ধুলোবালির জীবন। ১০৷ সাগরের ভেলা। ১১/ সৃষ্টি রহস্য। ১২/ মেঘের ভেলা। ১৩/ ধুলোবালির দলবল। ১৪/ দেহ ঘড়ির কাঁটা। ১৫/ বান্দা আমাকে খোঁজো। ১৬/ মাটির নিচে পানির সাগর 
১৭/ তবুও আমাকে চিনলে না। ১৮/ তারার দেশ। ১৯/ চন্দ্র সূর্যের কিরণ। ২০/ আমি আসমানকে করেছি ছাদ। 
২১/ আমি ডেকেছি, তুমি শোনোনি। ২২/ সৃষ্টি নৈপুণ্য। 
২৩/ সাগর। ২৪/ জীবজন্তু সৃষ্টি-রহস্য।
🍂বই পর্যালোচনা🍂
” কে তিনি” বইয়ের নামটা যেমন রহস্যময়; বইয়ের বিতরে রয়েছে এরকম হাজারো রহস্যময় প্রশ্নের জবাব, রয়েছে বিজ্ঞানের অনেক তথ্য। এ-তো সুন্দর করে উম্মদহের প্রতি প্রচন্ড দরদ আর ভালোবাসা নিয়ে লিখা হয়েছে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পরিচয়। লিখা হয়েছে আসমান-জমিন, গ্রহ-নক্ষত্র, চন্দ্র-সূর্য, মহাশূন্যে-মহাবিশ্ব নিয়ে লেখক এতোটাই ইখলাস আর দরদ দিয়ে লিখেছেন যা লেখকের নিষ্ঠা,তাকওয়ার ও খোদা-ভীরুর কথা বুঝা যায়। বইয়ের প্রতিটি কথা, প্রতিটি লাইন যেন হৃদয়ছেদ করে। বইটিতে লুকিয়ে আছে হাজারো গভীর অর্থ। আজ আমার যদি এই বইয়ের মর্যাদা দেবার মতো যোগ্যতা থাকতো বইটাকে স্বর্ণাক্ষরে খোদাই করতাম। বইটি শুধুমাত্র ধর্মীয় নয়, রয়েছে রবকে খোঁজে পাওয়ার উপায়। মহান রবের সাথে নিজের সম্পর্ক গভীর করার উপায়। মানব- মনকে আল্লাহর প্রতি আকৃষ্ট করা, আল্লাহর অসংখ্য নেয়ামত চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া এবং আল্লাহর পরিচয় চোখের অশ্রুতে, মনের আবেগে তুলে ধরা। একটা মানুষ তার মালিকের সাথে সম্পর্ক গড়ে নেয়ার আশায় রচিত হয়েছে “কে তিনি” গ্রন্থটি।
🍂বইটি কেনো পড়বেন🍂
বইটি পড়লে বুঝা যাবে সৃষ্টির রহস্য, স্রষ্টার পরিচয়।
বইটি পড়ার দ্বারা মহান আল্লাহকে নতুন করে নতুন ভাবে খুঁজে পাবেন। মহান রাব্বুল আল-আমীনের সাথে সম্পর্ক সুদৃঢ় হবে। এই বইয়ের এক জাদুময়ী ক্ষমতা আছে পথভ্রষ্ট বান্দাকে তাঁর রবের পথে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। বাস্তবতা সম্পর্কে জানতে পারবেন। অনেক বিজ্ঞানের তথ্য জানতে পারবেন। প্রতিটি ধাপ বুঝানোর জন্য খুব সুন্দর উদাহরণ দেয়া আছে।
🍁পাঠ্যঅনুভূতি🍁
“কে তিনি” বইটি সম্পর্কে এক কথায় যদি বলি তাহলে বলবো, আমি অনেক বই পড়েছি কিন্তু একমাত্র “কে তিনি” বইটি পড়েই আমি কান্না করেছি। বইটি আমি এক বসায় পড়তে পারিনি। মধ্যেখানে এসে এমন কান্না এসেছে যে বই রেখে দিয়ে খুলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আমার রবের স্মরণে নিজেকে অসহায় মনে করেছি। বইটি পড়তে গেলেই মনে হয়েছে বইটি আমাকে নিয়েই লেখা। প্রতিটি লাইন আমার চোখে পানি নিয়ে এসেছে। প্রতিটি শব্দ আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। বইটি পড়ছিলাম আর ভবছিলাম; এতটা বছর আমি কোন জগৎে বসবাস করছি! যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর এবাদত টুকুও করতে পারতেছি না। তিনি প্রতিনিয়ত আমাদেরকে এত এত নিয়ামত রিযিক দিচ্ছেন অথচ আমরা তার শোকর টাও আদায় করছি না। কতোটা গাফেল আমরা! 
“কে তিনি” বইটি আমার হৃদয়কে আঘাত করেছে। বিবেকের কাছে প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে কোথায় অবস্থান করছি আমি? এখনো তো আমি আমার রবকে খুঁজিনি!? আলহামদুলিল্লাহ্ বইটি অনেক প্রশান্তির। বইটি অনেক অনেক প্রশংসার যোগ্য আমি যত বলবো কম হয়ে যাবে। আমার মতে বইটি সবার পড়া উচিত। তাহলেই আল্লাহর সৃষ্টি, রহমত, নিয়ামত, সম্পর্কে জানতে পারবেন। বইটি পড়লে চোখে পানি ধরে রাখা যাবে না।
🍂প্রচ্ছদ🍂
প্রছদ! এটি আমাদের পাঠক মহলের কছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমরা যারা পাঠক-পাঠিকা আছি অবশ্যই একটি প্রচ্ছদ আর নাম দেখেই সর্ব প্রথম আকৃষ্ট হই বইটি সংগ্রহ করার জন্য। একটি একেক জনের কাছে একেক রকম হয়ে থাকে। পাঠক মহলে এরকম অসংখ্য বইয়ের প্রচ্ছদ আছে যে-গুলো প্রায় সব পাঠক-পাঠিকার মনে এক অন্যরকম আকর্ষণ অনুভব করায়। ঠিক সেরকমই একটি বইের প্রচ্চদ হলো “কে তিনি”। এ বইটির প্রচ্ছদ আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। বইটি যেমন অসাধারণ বইয়ের প্রচ্ছদটিও অসাধারণ। বইয়ের নামের সাথে প্রচ্ছদটা একদম খাপে খাপ যেন মিলে গেছে।
🍂নামকরণের সার্থকতা🍂
একটি বই যখন পাঠক প্রিয়তা পায়, যখন বইয়ের সবগুলো দিক পারফেক্ট হয়। আমার মতে একটি বই শুধু লিখলেই হয় না! বইয়ের সামঞ্জস্য রেখে একটি নামও দিতে হয়। আর এ বইয়ের নামটিই আমাদের মধ্যে এক ধরণের আকর্ষণ মূলক অনুভূতির উৎপত্তি করে। বইয়ের লেখার দিক দিয়ে বলা যায় বইয়ের নামকরণা সার্থকতা পেয়েছে।
🍂বইয়ের কোয়ালিটি
” কে তিনি” বইটি প্রকাশ করেছেন প্রয়াস প্রকাশনি। বইয়ের কোয়ালিটি নিয়ে আমার কোন প্রকার অভিযোগ নেই। বলা বাহুল্য প্রয়াস প্রকাশন বমাকে বিয়ের কোয়ালিটি নিয়ে কোন অভিযোগ করার সুযোগই দেয়নি। বইয়ের বাধাই আর পৃষ্ঠার মান অসম্ভব ভালো ছিলো। বইয়ের ছাপার কালিও ভালো ছিলো। একদম স্পষ্ট ভাবে প্রতিটি অক্ষর ফুটে উঠেছে বইয়ের পৃষ্ঠায়। আমহ শুধু বলবো বইয়ের নাম, প্রচ্ছদ, পৃষ্ঠার মান, বইয়ের বাধাইসহ সব কিছুই অসাধারণ।
🍁লেখক পরিচিতি
‘কে তিনি” বইটি লিখেছেন আমাদের প্রিয় লেখক “মিফতি মুহাম্মদ বিন-ইয়ামিন” কওমী অঙ্গনের একজন মেধাবী আলেম। দাওরা (মাস্টার্স সমমান) সম্পন্ন করেন নিজ শহর ব্রাহ্মনবাড়িয়া সুপ্রসিদ্ধ প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইউনুছিয়ায়। বর্তমানে অন্যান্য কাজের সাথে একজন সফল দাঈ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন ‘হিন্দু’ খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, অনেক অমুসলিম লেখকের হাত ধরে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছেন।
🍂পরিশিষ্টে
লেখকের সার্থকতা হলো পাঠককে তার লেখায় বুদ করে রাখা। প্রতিটি বিষয় দারুণ ভাবে উপস্থাপনের মধ্যে দিয়ে পাঠককে একেবারে লেখনীতে টেনে রাখা। একটা বই তখনই সার্থক যখন বইটা পড়ে পাঠক তৃপ্তি পায়। সকল দিক থেকে “কে তিনি” বইটি দারুণ। আল্লাহ লেখকের কলমে বারাকা দান করেন।লেখকের সাথে সাথে আমাদের সবাইকে কবুল করেন। উত্তোরত্তার উন্নতি দান করেন। আমিন
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?