দুজন দুজনার : মুহাম্মাদ আতীক উল্লাহ | Both of them : Muhammad Atiq Ullah

  • বইয়ের নাম : দুজন দুজনার
  • লেখক : মুহাম্মাদ আতীক উল্লাহ
  • প্রকাশনী : মাকতাবাতুল আযহার
  • বিষয় : ইসলামী সাহিত্য
  • পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১০৯
  • মুদ্রিত মূল্য : ২০০
ভালোবাসা কতটা প্রবল হয়, কতটা আলোড়ন তোলে হৃদয় তন্ত্রীতে। প্রিয় মানুষের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ কীভাবে ঘটাই আমরা। ভালোবাসা হরেক রকম, প্রিয় মানুষকে কতভাবেই না ভালোবাসা যায়। আমাদের জীবনের রোমাঞ্চকর বাকগুলো নির্ধারণ করে দেয় আমরা কাকে ভালোবাসবো। আমাদের ভালোবাসার প্রকাশ কেমন হবে।


ভালোবাসার পন্থাটা কী হবে। বেলা শেষে বাড়ি ফেরার মুহূর্তে ঘরে থাকা প্রিয় মানুষটির জন্যে কেউ ফুল নিয়ে যায়, কেউ সাজ সরন্জাম। কেউ প্রিয় মানুষটিকে ভালো রাখতে প্রয়োজনীয় আসবাব কেনে। কোনো প্রিয় মানুষটির বেশি প্রয়োজন দুলোকমা খাবারের; তাই নিয়ে ক্লান্ত প্রিয়জন বাড়ি ফেরে বেলা শেষে। প্রতিটা অলিতে গলিতে ভালোবাসার শত কোটি রঙ থাকে। যা আমাদের খালি চোখে খুব কমই ধরা পড়ে।


ভালোবাসার এই অসাধারণ রঙগুলো দিয়ে লেখক রাঙিয়ে তুলেছেন তার এই বইটি।


বইটির শুরুতে প্রিয় নবীর পরিবার নিয়ে লেখক যে গল্পটির অবতারনা করেছেন, সে গল্পটি পাঠকেরা আগে পড়ে থাকলে বা জেনে থাকলেও লেখকের লেখনি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে নতুন এক স্বাদের সাথে। হৃদয়কে আলোড়িত করে নিংড়ে আনবে অশ্রু। বইটি শুরু করতেই আপনার মনে হবে যেন আপনি নরম ডাল ও গুল্মবিষিষ্ট ফুলগাছে ভরা এক সুরভিত উদ্যানে প্রবেশ করেছেন। আরামদায়ক মৃদুমন্দ বায়ু দোল দিয়ে যাচ্ছে পুস্প বৃক্ষের শাখায় শাখায় আর তা দোল খাচ্ছে মখমলে দোলনায় ছোট কিশোরির দোল খাওয়ার মত করে।


প্রতিটি গল্প আপনাকে পুস্পের এক নতুন সারিতে এনে দাড় করিয়ে দেবে। সুবাসের মোহে আপনি আবার হাটা শুরু করবেন। গল্প বলার অনন্য এই স্বাদ আপনার অন্তরে অন্যরকম এক পরিবেশ তৈরি করে দেবে। এক অনুপম ভালোলাগা ছুঁয়ে যাবে আপনাকে। উদ্যানের প্রতিটি সারি পার হতে হতে হঠাৎ আবিস্কার করবেন উদ্যানের শেষ সিমানায় চলে এসেছেন আপনি। মৃদুমন্দ বায়ুর সাথে ভালোবাসার এক নতুন অনুভূতি আপনার শ্বাসের সাথে প্রবেশ করে দেহের ভেতরটা পরিস্কার করে বেরিয়ে আসবে। খেয়াল করবেন আপনার ভেতরে কোনো অভিমান বা অভিযোগ নেই। পৃথিবীটাকে আপনার মনে হবে শুধু ভালোবাসাময়। আশ্চর্য আপনার কোনো দুঃখ নেই তবু আপনার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়বে অশ্রু।


লেখকের সাবলিল গল্প বলার ঢং আপনাকে ঠিক উপরের অনুভূতিটাই দেবে। শুরু করলে শেষ করে ফেলতে পারবেন এক বসাতেই। ৩৯টি গল্পের প্রতিটিই যেন আলাদা রঙে সাজানো, আলাদা ঢঙে উপস্থাপিত। একটা গল্প/একটা বই আপনি কতবার পড়তে পারবেন? এই বই আপনি প্রতি সপ্তাহে একবার করে পড়লেও তৃপ্তি মিটবে না। এই বই একবার পড়ার নয়; প্রথমবার এক বসাতেই পড়ে নেবেন আর মন খারাপ থাকলেই বইটি নিয়ে বসতে পারেন, বৃষ্টিস্নাত বিকেলে বা পঞ্চদশির রাতে। চাঁদের সাথে, জোনাকির সাথে।


◑ একজন নারী যেমন স্বামী পছন্দ করে
.
চার মাযহাবের একজন প্রখ্যাত ইমাম, আহমাদ বিন হাম্বল। ইমাম সাহেবের ছেলের বিয়ের সব ঠিকঠাক। একদিন সময় করে পুত্রকে ডেকে পাশে বসালেন। আন্তরিক ভঙ্গিতে বলতে শুরু করলেন:


.
ওয়ালাদী! তুমি কি সুখী হতে চাও?
– না—আম ইয়া আবী! (হ্যা অবশ্যই আব্বাজান!’)
তাহলে তোমাকে তোমার হবু জীবনসঙ্গিনীর জন্যে দশটা বিষয় নিয়ে যেতে হবে।
– কী সেগুলো? কোথায় পাওয়া যাবে?
তোমাকে কোথাও যেতে হবে না। কিনতেও হবে না। আমার কাছে, তোমার কাছে, সবার কাছেই সেগুলো আছে। সবাই ব্যবহার করতে পারে না। এই যা। তাহলে চলো দেখা যাক, অমূল্য সেই দশটা বিষয় কী?


.
👉🏻 প্রথম ও দ্বিতীয়: নারীরা সাধারণত রোমান্টিকতা পছন্দ করে। খুনসুটি রসিকতা পছন্দ করে। নখরা-ন্যাকা তাদের স্বভাবজাত। তারা ভালোবাসার স্পষ্ট প্রকাশকে খুবই পছন্দ করে। তুমি একান্তে তোমার স্ত্রীর কাছে এসব প্রকাশে কখনোই কার্পণ্য করবে না। তাকে বেশি বেশি ভালোবাসার কথা বলবে।


.
যদি এসবে কার্পণ্য করো, তাহলে দেখবে কিছুদিন পরই তোমার আর তার মাঝে একটা অদৃশ্য পর্দা ঝুলে গেছে। এরপর দিনদিন পরস্পরের সম্পর্কে শুষ্কতা আসতে শুরু করবে। ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালাবার পথ খুঁজবে।


.
👉🏻 তৃতীয়: নারীরা কঠোর-কর্কশ-রূঢ়-বদমেজাজী-রুক্ষস্বভাবের পুরুষকে একদম পছন্দ করে না। তোমার মধ্যে এমন কিছু থেকে থাকলে এখনই ঝেড়ে ফেল। কারণ তারা সুশীল, ভদ্র, উদার পুরুষ পছন্দ করে। তুমি তার ভালোবাসা অর্জনের জন্যে, তাকে আশ্বস্ত করার জন্যে হলেও গুণগুলো অর্জন করো ৷


.
👉🏻 চতুর্থ: এটা খুব ভাল করে মনে রাখবে, তুমি তোমার স্ত্রীকে যেমন পরিচ্ছন্ন, সুন্দর, পরিপাটি, গোছালো, সুরুচিপূর্ণ, সুগন্ধিময় দেখতে চাও, তোমার স্ত্রীও কিন্তু তোমাকে ঠিক তেমনটাই চায়। তাই সাবধান থাকবে, তার চাহিদা পূরণে যেন, কোনও অবস্থাতেই, তোমার পক্ষ থেকে বিন্দুমাত্র অবহেলা না হয়।


.
👉🏻 পঞ্চম: ঘর হলো নারীদের রাজ্য। একজন নারী নিজেকে সব সময় সেই রাজ্যের সিংহাসনে আসীন দেখতে খুবই পছন্দ করে। সে কল্পনায়, স্বপ্নে, বাস্তবে এই রাজ্য নিয়ে ভাবে। সাজায়। রচনা করে। খুবই সাবধান থাকবে! কখনোই তোমার স্ত্রীর এই সুখময় রাজত্বকে ভেঙে দিতে যেও না। এমনকি তাকে সিংহাসন থেকে নামিয়ে দেয়ার প্রয়াসও চালাবে না।


.
👉🏻 ষষ্ঠ: নারীরা তার স্বামীকে মনেপ্রাণে-সর্বান্তঃকরণে প্রবলভাবে স্বামীকে পেতে চায়। তবে পাশাপাশি বাপের বাড়িকেও হারাতে চায় না। হুঁশিয়ার থেকো বাবা! তুমি ভুলেও নিজেকে আর স্ত্রীর পরিবারকে এক পাল্লায় তুলে মাপতে শুরু করে দিওনা। তুমি এ অন্যায় দাবী করে বসো না, হয় আমাকে বেছে নাও, নাহলে তোমার বাবা-মাকে।


তুমি এ বিষয়টা চিন্তাতেও স্থান দিও না। তুমি তাকে এমনটা করতে বাধ্য করলে, সে হয়তো চাপে পড়ে মেনে নিবে। কিন্তু তার মনের গহীনে কোথাও একটা চাপা-বোবা কান্না গুমরে মরতে থাকবে। তোমার প্রতি এক ধরনের সুপ্ত অশ্রদ্ধা তার কোমল মনে জেগে উঠবে।


.
👉🏻 সপ্তম: তুমি জানো, অনেক শুনেছ এবং পড়েছ নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে বাহু (বা পাঁজরের) বাঁকা হাড় থেকে। এই বক্রতা কিন্তু তার দোষ নয়, সৌন্দর্য। তুমি চোখের ভ্রু লক্ষ করে দেখেছো? সেটার সৌন্দর্যটা কোথায়?


.
– বক্রতায়।
.
একদম ঠিক কথা। বক্রতাই ভ্রুকে সুন্দর করে তোলে। ভ্রুটা যদি সোজা হতো, দেখতে সুন্দর লাগতো না। যদি তোমার স্ত্রী কোনও ভুল করে ফেলে, অস্থির হয়ে রেগেমেগে হামলা করে বসো না। উত্তেজিত অবস্থায় তাকে সোজা করতে যেও না, তাহলে অতিরিক্ত চাপে ভেঙে যাবে। আর ভাঙা মানে বুঝই তো, তালাক ।


.
👉🏻 অষ্টম: তুমি হাদীসটা পড়োনি?
– কোনটা আব্বাজান?
– ঐ যে, যার ভাবার্থ হলো: নারীদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে এমনভাবে যে, তারা স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়। তার প্রতি অতীতে কৃত সব সদ্ব্যবহার-সদাচার ভুলে যায়। তুমি যদি তার প্রতি যুগ-যুগান্তরও সুন্দর আচরণ করো, হঠাৎ একদিন কোনক্রমে একটু রূঢ় আচরণ করে ফেলেছো, ব্যস অমনিই সে নাকের জল চোখের জল এক করে বলবে: ‘আমি তোমার কাছ থেকে কখনোই ভালো কিছু পাইনি।’


.
দেখো বাছা! তার এই আচরণে রুষ্ট হয়ো না। তার এই চপল স্বভাবের প্রতিক্রিয়ায় তার প্রতি বিতৃষ্ণা এনো না। তার এই স্বভাবকে তুমি অপছন্দ করলেও, তার মধ্যে তুমি অনেক এমন কিছু পাবে যা তুমি শুধু পছন্দই করো না, বরং জানও লড়িয়ে দিতে পারো।


.
👉🏻 নবম: নারীদের শরীর-মনের অবস্থা সবসময় এক রকম থাকে না। এক সময় এক রকম থাকে। প্রতি মাসে নির্দিষ্ট একটা সময় তাদের শারীরিক দুর্বলতা থাকে। অনেক সময় মানসিক অস্থিরতাও বিরাজ করে। তাদের এই দুর্বলতা, অসহায় অবস্থার কথা বিবেচনা করে আল্লাহ তা’আলা তাদের নির্দিষ্ট সময়ের নামায মাফ করে দিয়েছেন। রোযাকে পিছিয়ে দিয়েছেন, তার স্বাস্থ্য ও মেজাজ ঠিক হওয়া পর্যন্ত ।


.
তুমি তো রাব্বে কারীমের বান্দা। তুমিও তোমার রবের গুণে গুণান্বিত হও। রব্বানী হও। তুমি তোমার স্ত্রীর দুর্বল মুহূর্তগুলোতে তার প্রতি কোমল হবে। তোমার আব্দার আবেগ শরমে রেখো। তোমার রবও খুশি হবেন, তোমার রাব্বাহও খুশি হবে। কৃতজ্ঞ হবে।


.
👉🏻 দশম: সবসময় মনে রেখো, তোমার স্ত্রী তোমার কাছে অনেকটা দায়বদ্ধ, বিভিন্নভাবে তোমার মুখাপেক্ষী। তোমার সুন্দর আচরণের কাঙাল। তুমি তার প্রতি যত্নবান হবে। তার প্রতি অনেক বেশি মনোযোগ দিবে। তাকে আপন করে নিবে। তাহলে সে তোমার জন্যে শ্রেষ্ঠ সম্পদে পরিণত হবে। তাকে অনুপম সঙ্গী হিশেবে পাবে।


.
‘দুজন দুজনার’ বই থেকে
লেখক: মুহাম্মাদ আতীক উল্লাহ
 দুজন দুজনার
Leave a Reply 0

Your email address will not be published. Required fields are marked *