নসফেরাতু : তানজীমা ইসলাম – বাংলা অনুবাদ | Nosferatu Bangla By Tanzima Islam

রিভিউঃ নসফেরাতু
প্রকাশকালঃ অমর একুশে গ্রন্থমেলা, ২০২২ (নব সাহিত্য প্রকাশনী)
বই মূল্যঃ ১৫০৳
লেখিকাঃ তানজীমা ইসলাম
ক্যাটাগরিঃ ফ্যান্টাসি থ্রিলার
রিভিউ লেখায়ঃ আরুশি তাসনিম

নামকরণের_যথার্থতাঃ নসফেরাতু একটি হাঙ্গেরিয়ান- রোমানিয়ান শব্দ যার অর্থ রক্তচোষা পিশাচ। যদিও উপন্যাসটি রক্তচোষা ও মায়া নেকড়ে নিয়ে লেখা। তবে উপন্যাস পড়ে মনে হয়েছে এখানে ভ্যাম্পায়ারকে প্রধান চরিত্রে দেখা যাবে, তাই নামকরণটা একদম পার্ফেক্ট বলে মনে হচ্ছে৷

কাহিনি_সারসংক্ষেপঃ শুরুতে দেখা যায়, একটি নিস্তব্ধ রাতের দৃশ্য। যেখানে, ইউক্রেনের একটি ছোট্ট গ্রাম ওসনোভা’র বাসিন্দা ভিক্টোরিয়া ওরফে অরিয়া তার ছোট বোন’কে ঘুম পাড়াতে আধিভৌতিক গল্প শোনায়। ছোট বোন ঘুমিয়ে পড়ার পর অরিয়া তার দাদুর পড়ার ঘরে প্রবেশ করে। ইদানীং তার অবসর কাটে এই ঘরে সাজানো বুকশেলফ জুড়ে থাকা বইয়ের সমুদ্রে।
বছর কয়েক আগেই বাবা-মা’কে হারিয়েছে সে। তারপর চলে গেছে দাদুও। তাদের মৃত্যুও ছিলো ভীষণ রহস্যময়। যার বেড়াজাল আজও ভেদ করতে পারেনি অরিয়া।
তার দাদু ছিলেন ভ্যাম্পায়ার হান্টারদের একজন সদস্য। ভ্যাম্পায়ার শিকার করতে চষে বেড়িয়েছেন রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া সহ বহু অঞ্চলের পাহাড়-পর্বত। কিন্তু শেষবার শিকার থেকে ফিরেই কেমন যেন অদ্ভুত পরিবর্তন ঘটল তার মাঝে। সেই সাথে ড্যাটসিয়াক পরিবারের ওপর একে একে নেমে এসেছিলো অদৃশ্য এক ভয়ংকর অপশক্তির ছোবল।
কি হয়েছিলো তারপর!? ভিক্টোরিয়া কি জানতে পেরেছিলো, তার আপনজনের মৃত্যুর কারণ? নাকি নিজেও হারিয়ে গেছিলো রহস্যের বেড়াজালে!?

পাঠ_প্রতিক্রিয়া: উপন্যাসটি খন্ডে বিভক্ত। এ বছর প্রথম খন্ড প্রকাশ পেলেও লেখিকা’র পেইজে বিভিন্ন ফ্ল্যাপ পড়েছি যা আসবে উপন্যাসের পরবর্তী অংশে। মানে অপেক্ষা করছে আরও আকর্ষনীয় চমক। প্রথম খন্ড পড়ে মনের আশ মেটেনি আমার। অবশ্য সিরিজ করা বই পড়লে আমার এই অবস্থাই হয়। শেষটা না পড়া পর্যন্ত অতৃপ্তি লাগছে খুব।

ভালো_লাগার_চরিত্র: “জোনাস” চরিত্রটি’কে বেশ ভালো লেগেছে আমার। রক্তের সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও সে যেভাবে তার, একমাত্র বন্ধুর অনাথ নাতনি দুটোকে আগলে রেখেছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও সে দায়িত্ব থেকে সরে আসেনি। যারা বইটি পড়বেন বা পড়েছেন তারা অবশ্যই বুঝতে পারবেন কেন এতো ভালো লেগেছে এই চরিত্রটিকে।

“অরিয়া” চরিত্রটি’কে বেশ সাহসী মনে হয়েছে আমার। সরল স্বভাবের সাধারণ একটা মেয়ে। অল্প বয়সে পরিবারের দেখভাল করতে নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বিসর্জন দিয়েছে।
আপনজন হারানোর শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই পরিবার সামলাতে হয়েছে তাকে।

ভালো_লাগার_দিকসমূহ: লেখিকার লেখনী বরাবরই দারুণ লাগে। নির্ভূল লেখা, মার্জিত ভাষা, অসাধারণ শব্দ গাথুনী সব মিলিয়ে পড়তে একটুও বিরক্তি আসেনি। এটাই লেখিকার লেখা প্রথম বই, অথচ লেখা পড়ে বারবার মনে হয়েছে বিদেশি কোনো লেখকের লেখা বঙ্গানুবাদ পড়ছি! এত সুন্দর করে প্রতিটি চরিত্র, প্রতিটি দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছেন যে নিজেকে মনে হয়েছে গল্পেরই কোনো চরিত্র। যেন বাস্তবে দেখতে পাচ্ছি সব। পঅড়তে পড়তে মুগ্ধ হয়েছি বার বার।

আমাকে সব থেকে যা মুগ্ধ করেছে তা হল, অতিপ্রাকৃত নিয়ে লেখা। আমি বরাবরই ফ্যান্টাসি টাইপ গল্প উপন্যাস পড়তে পছন্দ করি। কিন্তু ফেসবুকে বা বইয়ে বিদেশি প্লটে লেখা এমন অসাধারণ উপন্যাস পাইনি বললেই চলে। ফেসবুকে না পেলেও কিছু বইয়ে অবশ্য পেয়েছি।

Leave a Reply 0

Your email address will not be published. Required fields are marked *