নারীবাদী বনাম নারীবাঁদি : লেখক কারিম শাওন | Naribadi Bonam Naribadi

  • বই : নারীবাদী বনাম নারীবাঁদি
  • লেখক : কারিম শাওন
  • প্রকাশনী : ফেরা প্রকাশন
  • রিভিউ ক্রেডিট : Musab Ibn Umayer

একদিন কথা প্রসঙ্গে দ্বীনি এক বড়ো ভাইকে বলছিলাম, “রাসূল (সা.) যে নারীদেরকে সুগন্ধি মেখে বাহিরে বের হতে খুব কড়াকড়িভাবে মানা করেছেন, সেই কথার মর্ম এখন হাড়ে হাড়ে টের পাই।” 

আবূ মূসা (রা.) থেকে বর্ণিত :
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন– প্রতিটি চোখই যেনাকারী। কোনো নারী সুগন্ধি মেখে কোনো মজলিসের পাশ দিয়ে গেলে সে এমন এমন, অর্থাৎ যেনাকারিণী। (তিরমিজি, হাদিস নং ২৭৮৬) 
আমার কথায় উনি মুচকি হাসলেন। 
আমি বললাম, “সত্যি সত্যিই এমন সুগন্ধির ঘ্রাণে মনের ভেতরে একটা আকর্ষণ তৈরি হয়। সারা শরীরে কেমন যেন একটা বিদ্যুতের ঝাকুনি লাগে। যেই পুরুষরা বলে যে, নারীদের সুগন্ধির ঘ্রাণে ওদের কিছুই হয়না, সেসব পুরুষদের আসলে পুরুষত্বের ধার কমে গেছে।” 
কথা শেষ করে মনে মনে ভাবলাম- যাক খুব পুরুষত্বের প্রমাণ দিলাম। নিজেকে একটু সিংহ-পুরুষ মনে হতে লাগল। 
আমার কথা শেষ হতে না হতেই ওই ভাই বলে উঠল, “আপনি সুগন্ধির কথা বলেন, আরে সুগন্ধিতো অনেক দূরের ব্যাপার, মেয়েরা সামান্য হিল জুতো পরে হেঁটে যাওয়ার সময় সেই জুতোর ‘ঠকঠক’ আওয়াজ কানে আসলেও মনের ভেতরে কেমন যেন লাগে।” 
কথাটা শুনে নিজেকে বাচ্চা বিড়াল মনে হতে লাগল। মনে মনে বললাম- এ তো দেখি দাদার ওপরে বড়ো দাদা। 
আসলে ব্যাপারগুলো এমনই। নারীদের পর্দাহীন পোশাক ভালো চরিত্রের পুরুষের মনকেও প্রভাবিত করে। কারণ সে পুরুষ। তবে এই ভালো চরিত্রের পুরুষরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার ভয়ে নিজেকে অবৈধ কামনা-বাসনা থেকে বিরত রাখে। এমনকি চলার পথে কোনো নারীর দিকে যদি চোখ পরেও যায়, তবে সেই নারীকে নিয়ে ভালো চরিত্রের পুরুষরা দ্বিতীয়বার ভাবতেও ভয় পায়। আর এই কাজটা বদ চরিত্রের পুরুষরা করতে পারে না। যার ফলে এই বদ চরিত্রদের মধ্য থেকে অতি বদ চরিত্রের পুরুষরা (কাপুরষরা) কুকুরের মত কোনো অসহায় নারী কিংবা কোনো বদ নারীর ওপর হামলে পরে।
বিপরীত লিঙ্গের প্রতি ভালোবাসা অনুভব করাটা মনস্তাত্ত্বিক একটা ব্যাপার। পরবর্তী সময়ে বয়স বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে জৈবিক তাড়নাটাও এসে যুক্ত হতে থাকে ধীরে ধীরে। একটা ছেলে বা মেয়ে নির্দিষ্ট কোন বয়স থেকে মনস্তাত্ত্বিক এই নতুন জগতে ডুবে যাওয়া শুরু করে, সেটা নির্ণয় করার মতো কোনো যন্ত্র পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। তা ছাড়া কোনো মানুষের পক্ষে অন্য কারও মনের ভেতরে ঢুকে দেখা সম্ভব নয় যে, তার মনের ভেতরে আসলে কী চলছে। কখনও কখনও ৬-১০ বছর বয়সের ছেলে-মেয়েরা এই বিষয়ে অতিমাত্রিক পরিণত আচরণ করে ফেললে যারা তাদেরকে আদর করে ইঁচড়েপাকা বলে ডাকেন, মনে রাখা উচিত, সেসব ছেলে-মেয়ের মনের ভেতরের অবস্থা কি সেটা জানা কিন্তু আদৌ আপনাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
যদি এমন ‘ইঁচড়েপাকা’ আচরণকে আপনি মুগ্ধতা বা কৌতূহল বলে আখ্যায়িত করতে চান, তাহলে আমি বলব– যখন থেকে এই বিষয়ে কৌতূহল তৈরী হলো, তখন থেকেই তার বয়ঃসন্ধিকাল শুরু হয়েছে। কারণ, যে বিষয়ে কিছু মাস আগেও তার কৌতূহল জাগেনি, হঠাৎ তার মধ্যে এমন কী পরিবর্তন হলো যে ‘ওই’ বিষয়ে সে এমন কৌতূহলী হয়ে উঠল? সুতরাং, ৬-১০ বছরের ছেলে-মেয়েরা বয়স কম হওয়ার কারণে কৌতূহলী হয়ে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি ভালবাসার টান অনুভব করছে, এমন যুক্তি অসার। অর্থাৎ, উক্ত বিষয়ে এমন আগ্রহী হওয়ার মানে হলো–সে মানসিক বিকাশের প্রথম ধাপে পৌঁছে গেছে। এখন থেকে প্রতিদিন সে একটু একটু করে সামনের দিকে এগুবে। এই বিষয়ে সে আরও বেশি বেশি জানতে চাইবে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে।
আমি কিন্তু এটা বলছি না যে, এই বয়সে একটা ছেলে বা মেয়ে ভালবাসার আদ্যোপান্ত সব বুঝে ফেলে। আমি বলতে চাইছি, এই বয়স থেকে তাদের মধ্যে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি ভালবাসার ব্যাপারে কিঞ্চিৎ একটা মানসিক পরিবর্তন দেখা যায়।
ধরুন ‘ক’ এবং ‘খ’ নামক দুজন ব্যক্তির দুজনই শারীরিকভাবে সব দিক থেকে সুস্থ এবং তাদের শরীরের প্রতিটা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতা ঠিকঠাকমতো আছে। শুধু ব্যক্তি ‘ক’ এর চোখ দুটো অন্ধ। একদিন এই দুজন ব্যক্তিকে দুজন সুন্দরী নারীর সাথে বিবাহ দেয়া হলো। 
এখন সহজ একটা প্রশ্নের উত্তর দিনতো দেখি, এই দুই ব্যক্তির মধ্যে কোন ব্যক্তিটি তার স্ত্রীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে তুলনামূলকভাবে বেশি সুখ এবং শান্তি পাবে? 
সহজ উত্তরটা হবে ব্যক্তি ‘খ’। কারণটা নিশ্চয়ই আর ভেঙে বোঝাতে হবে না। চাইলে আলোচনার এই পর্যায়েই কথা শেষ করে দেয়া যায় শুধু এই বলে যে, “বুঝেছেন নারীদেরকে পর্দা করে ঘরের বাহিরে বের হতে হয় কেন?”
কোনো একটা জিনিসকে শতভাগ উপভোগ করার জন্য মানুষের শরীরের পাঁচটা ইন্দ্রিয়ের প্রতিটা থাকা আবশ্যক। সেই হিসেবে ব্যক্তি ‘খ’ তার স্ত্রীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার সময় স্ত্রীর সৌন্দর্য চোখে দেখতে পারছে বলে সে যতটা শারীরিক সুখ পাবে, স্বামী ‘ক’ -এর চোখ অন্ধ থাকার কারণে সে কিন্তু ব্যক্তি ‘খ’ -এর সুখের ধারে কাছেও যেতে পারবে না। কারণ চোখে কোনো কিছু দেখতে না পারার অনুভূতির বিকল্প কোনো অনুভূতি মানুষের নেই। অর্থাৎ তৃপ্তির সঙ্গে পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করে শতভাগ যৌনক্ষুধা নিবারণ করার জন্য শরীরের পাঁচটা ইন্দ্রিয়ই ব্যবহৃত হতে হবে।
সুতরাং, চোখ দিয়ে দেখাটাও যৌন ক্রিয়ার একটা অংশ। শুধু অংশ বললে ভুল হবে, বরং অন্যতম প্রধান অংশ। একটা প্রবাদ বাক্য মনে পরে গেল–’ঘ্রাণেই অর্ধ ভক্ষণ, দর্শনেই অর্ধ সংগম।’
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?