রাইফেল, রোটি, আওরাত-আনোয়ার পাশা

বইয়ের নাম: রাইফেল, রোটি, আওরাত
লেখক: আনোয়ার পাশা
ধরণ: মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস
পৃষ্ঠা: ১৮০ পেজ

পারসোনাল রেটিং: বইয়ের রেটিং কখনো দেই না। কলমের কালি যেন পবিত্র তেমনি বইয়ের অক্ষরও আমার কাছে পবিত্র৷ বইটি পড়ে কারো একঘেয়েমি লাগবে এইটুকু নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি।

আনোয়ার পাশা ১৯২৮ সালের ১৫ এপ্রিল জন্মগ্রুহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের প্রখ্যাত কবি ও কথাসাহিত্যিক। লেখক একাত্তরের কালারাত্রি ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর রক্তঝড়ালো হাত থেকে বেঁচে বের হতে পারলেও একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বরে মিরপুরের বধ্যভূমিতে পাকিস্তানি সেনবাহিনীর সহযোগী আল বদর বাহিনীর হাতে নিহত হন।

মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রথম উপন্যাস রাইফেল, রোটি, আওরাত। ১৯৭১ সালে ২৫ শে মার্চ ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে যখন পাকিস্তানের বাহিনী বাংলার ঘুমন্ত মানুষের উপর গুলিবর্ষণ করে, সেই সময়ের জীবন্ত চিত্র লেখক তাঁর বইয়ে তুলে ধরছে।

সেই কালো রাতে ভয়ানক বর্ণনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সুদীপ্ত শাহীনের চরিত্রে লেখক নিজকে তুলে ধরছে। “বাংলাদেশে নামল ভোর”- এই উক্তি দিয়ে লেখক উপন্যাসটি শুরু করে। ভয়ানক কালো রাত পেরিয়ে যখন ভোর নামল তখন জানালায় বাইরের অগণিত লাশ দেখে নিজের বেঁচে থাকার অস্তিত্ব দেখে নিজেই বিস্মিত হয়ে যান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল, রোকেয়া হল, শিক্ষকদের বাসভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে নরযজ্ঞ হত্যার বর্ণনা তুলে ধরছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালিয়ের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ডা. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুর, ডা. ফজলুর রহমান, ডা. মুকতাদিরসহ অসংখ্য শিক্ষকে সেই কালো রাত্রে হত্যার ঘটনা লেখক তুলে ধরে।

নরহত্যার পাশাপাশি দোকান, ঘর বাড়ি লুটপাট সহ ঘুমন্ত মানুষের বসতবাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনাও সেই কালো রাত্রির চিত্রে ফুটে উঠে। এক স্থানের মানুষ অন্য জায়গাকে নিরাপদ মনে করে অন্যত্র চলে যেতো, কিন্তু পর্যালোচনা করলে দেখা যায় সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের উপরই পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ বহমান ছিল। সেই সময়ে কোনো স্থানেই নিরাপদ ছিল না।

ফিরোজ চরিত্রের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ তাৎকালীন ভূমিকাগুলো উল্লেখ করছেন। পঁচিশে মার্চ হত্যাযজ্ঞ চালানোর পর বাংলার সমগ্র মানুষ নিজের চিন্তার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকা নিয়েও শঙ্কায় ছিলেন। লেখক এই উপন্যাসে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রেপ্তার হওয়ার কারণটিও সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে ধরছেন।

পাকিস্তানি বাহিনীর পাশাপাশি জামায়তে ইসলামী এই বাংলাদেশের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতার পরিচয় দিয়েছে। তারা বাঙ্গালী নামক অস্তিত্বেকে মিটিয়ে দেওয়ার জন্য যে ফন্দি এঁকেছিল তাঁর গল্পও উপন্যাসে লেখক ফুটিয়ে তুলেছে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বের ইতিহাস যদি আজকের প্রজন্ম না জানে তাহলে একসময় নতুন প্রজন্মের কাছে রক্ত দিয়ে কিনা এই দেশ মূল্যহীন হয়ে যাবে৷ ইতিহাস পাঠক আমাদের নতুন প্রজন্মে অনেকটা কম, তাই উপন্যাস বা গল্পের মাধ্যমে যখন ইতিহাস ফুটিয়ে তুলা হয় তখন সেটি পাঠক খুব সাচ্ছন্দ্যের সাথে পাঠ করে। লেখক আনোয়ার পাশা নিজের সাথে ঘটে যাওয়া কাহিনীগুলোই সুদীপ্ত শাহীন চরিত্র তথা রাইফেল, রোটি, আওরাত বইয়ে তুলে ধরছে।

Leave a Reply 0

Your email address will not be published. Required fields are marked *