ফ্যান্টাসি কি? ফ্যান্টাসি নিয়ে বিস্তারিত জানুন | What Is Fantasy? Know More About Fantasy

ফ্যান্টাসি কি? ফ্যান্টাসি নিয়ে অল্পবিস্তর জানুন

ফ্যান্টাসি কি? ফ্যান্টাসি নিয়ে বিস্তারিত জানুন | What Is Fantasy? Know More About Fantasy

ফ্যান্টাসি কী এই নিয়ে পৃথিবীর অনেক তাবড় তাবড় ব্যক্তি থেকে নিখাদ ফ্যান্টাসি প্রেমীরা পর্যন্ত খুব সুন্দর এবং আকর্ষণীয় সব ব্যাখা দিলেও কিছু শব্দ, কয়েকটি বাক্য অথবা শ’খানেক প্যারা লিখেও হয়তো এই ফ্যান্টাসি নিয়ে বিশ্লেষণ শেষ হবে না। তবে, আমাকে যদি এক শব্দে ফ্যান্টাসির সংজ্ঞা দিতে বলা হয়—তাহলে বলব ‘স্বাধীনতা’। খুবই লাইট মনে হতে পারে সংজ্ঞাটি। একটু আলোকপাত করলে হয়তো বোঝাতে সক্ষম হব।
ফ্যান্টাসি অর্থ বাংলায় কল্পনা, দিবাস্বপ্ন অথবা অবাস্তব কিছু নিয়ে ভাবনা। লেখকরা যখন এই বাস্তব দুনিয়ার যত রংতামাশা, রাজনীতি, কূটনীতি, ভূতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, ঐতিহাসিক কাহিনি, গুপ্ত সংঘ ও নানান ষড়যন্ত্র তত্ত্বের মিশেলে তুকতাক, জাদুবিদ্যা এবং বুজরুকি মিশিয়ে এক অবাস্তব দুনিয়া তৈরি করার প্রচেষ্টা হলো ফ্যান্টাসির একটি অংশ। ফ্যান্টাসি একটি জনরা, যার উপজনরার শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে নানান দিকে। যেমন—দ্য লর্ড অব দ্য রিংস, হ্যারি পটার, মিস্টবর্ন, নার্নিয়া এবং আমাদের দেশের কুয়াশিয়া বই ❛হাই ফ্যান্টাসি❜ জনরায় অন্তর্ভুক্ত। আবার, অ্যা সং অব আইস অ্যান্ড ফায়ার, হিরোস অব অলিম্পাসের মতো সিরিজগুলো লেখা হয়েছে ❛এপিক ফ্যান্টাসি❜ জনরায়। এ-রকম আরবান, পোর্টাল, লো, সায়েন্স, গ্রিমডার্ক, ইয়ং অ্যাডাল্ট-সহ অনেক উপজনরা—ফ্যান্টাসি জনরার মধ্যে আবদ্ধ হয়ে রয়েছে।
এমনও হয়েছে একটা ফ্যান্টাসি সিরিজে দু’রকম উপজনরার প্রভাব রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ‘দ্য লর্ড অব দ্য রিংস’ হাই ও এপিক ফ্যান্টাসি জনরার সংমিশ্রণ। 
হাই ফ্যান্টাসি বলতে পুরোপুরি স্বতন্ত্র এক জগৎ যা আমরা সেকেন্ডারি ওয়ার্ল্ড হিসেবে জানি। এই জগতে জাদুর ব্যবহার সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
অন্যদিকে এপিক ফ্যান্টাসি থেকে হাই ফ্যান্টাসির পার্থক্য বাস্তবতায়। এপিক ফ্যান্টাসিতে সেকেন্ডারি ওয়ার্ল্ড বিল্ড করা হয় অনেকটা আমাদের পৃথিবীর প্রতিরূপে। যেখানে বড়ো কোনো হুমকি অথবা সিংহাসন নিয়ে সংঘাত, চরিত্রদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, ষড়যন্ত্রের সর্বোচ্চ ব্যবহার, অল্পবিস্তর জাদু-সহ অনেক কাহিনির উল্লেখ থাকে। এপিক ফ্যান্টাসির জল অনেক দূর গড়িয়ে যায়, সেই দিক থেকে উপভোগ্য হয় অনেক বেশি। গত বছর সাড়া জাগানো ‘মিস্টবর্ন’ হচ্ছে গ্রিমডার্ক ও হাই ফ্যান্টাসির মিশেলে লেখা। যেখানে স্বতন্ত্র দুনিয়া আছে, আছে ম্যাজিকের ইউনিক সব ব্যবহার। ❛গ্রিমডার্ক ফ্যান্টাসি❜ জনরার বৈশিষ্ট্য হলো মাত্রাতিরিক্ত বাস্তবায়িত। এই জনরার চরিত্রদের লেখকরা অ্যান্টি হিরোর রোল প্লে করাতে পছন্দ করেন। এ-ছাড়া গ্রিমডার্ক ফ্যান্টাসিতে চৌর্যবৃত্তি, খুন, ধর্ষণ, দুর্নীতির মতো কাজগুলো খুবই হাইলাইট করে দেখানো হয়। যেমনটা আমরা মিস্টবর্নে দেখেছি। 
যাহোক, ফ্যান্টাসি নিয়ে ভাসাভাসা কিছু ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করলাম। পূর্ণাঙ্গ আলোচনা করতে অনেক সময় এবং লক্ষাধিক শব্দের উৎপাদন প্রয়োজন হবে—যা আপাতত সম্ভব নয়। এ-পর্যায়ে এসে আশা করি বুঝতে পেরেছেন কেন আমি ফ্যান্টাসিকে স্বাধীনতার সংজ্ঞায় যুক্ত করেছি? আপনি সমকালীন বা থ্রিলারে এমন অনেক বিষয় অকপটে স্বীকার করলেও দেশিয় প্রেক্ষাপটে থেকে রাষ্ট্রের নিন্দা, চলমান ঘটনা নিয়ে বিতর্ক কখনোই সোজাভাবে প্রকাশ করতে পারবেন না যা ফ্যান্টাসির তৈরি দুনিয়ায় অনায়াসে করতে পারবেন। সেই দুনিয়ায় শুধু লেখকের রাজত্ব চলে। পাঠক হিসেবে আপনি অনেক অসংলগ্ন বিষয়ও বাস্তব পৃথিবীর সাথে মেলাতে সক্ষম হবেন। দার্শনিক আলাপচারিতা বাদ দিয়ে এ-বার একটু অ্যাডভেঞ্চার আর রূপকথা নিয়ে কথা বলি।
ফ্যান্টাসি বিশেষ কিছু কারণে পাঠক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
আলোচিত কিছু ঐতিহাসিক ও মিথলজিক্যাল ক্রিয়েচার, জাদু শেখানোর কৌশল এবং সেগুলোর হরেক রকম ব্যবহার। আছে দুর্দান্ত অ্যাকশন সিকোয়েন্স এবং প্রতীক্ষিত কাহিনির শেষ যুদ্ধ। এ-ছাড়া আছে ভালো-মন্দের লড়াই, অভাবনীয় নানান ঘটনার সাথে পরিচিতি। ফ্যান্টাসি পুরোপুরি আলো ও অন্ধকারে নিমজ্জিত এক দুনিয়া যা পুরোটাই তৈরি লেখকের কল্পনা থেকে। যেখানে বিচরণ করতে যে-কারও ভালো লাগবে। ছোটোবেলার ঠাকুরমার ঝুলি, রাক্ষস-খোক্কস নিয়ে কম গল্প পড়া হয়নি আমাদের; যেখানে বলা হতো রূপকথার যত গল্প। যা চাইলে ধরা যেত না, ছোঁয়া যেত না। শুধু কল্পনার ডানায় বসে ঘুরে আসা যেত। এ-যেন এক ঘোর লাগানো ফ্যান্টাসি জগৎ।
ভবিষ্যৎ বাংলা ফ্যান্টাসির সম্ভবনা নিয়ে কিছু কথা ও ভাবনা: 
একটু আগে বললাম, ফ্যান্টাসি পুরোপুরি আলো ও অন্ধকারে নিমজ্জিত দুনিয়া। কথাটির সত্যতা যাচাই করা যাক। বিদেশি লেখকদের নিকট বা বাইরের দেশে এই দুনিয়া যতটা উজ্জ্বল; আমাদের দেশে ঠিক তার উলটো অর্থাৎ অনুজ্জ্বল। অথচ যে দেশে রূপকথার বিশাল এক ইতিহাস আছে, অঞ্চল ভেদে নানানরকম গালগল্প বাতাসে চরকির মতো ঘুরে-বেড়ায়; সেই দেশে কি-না ফ্যান্টাসির দুনিয়া পুরোপুরি ঘুমিয়ে আছে! কীভাবে সম্ভব? তাহলে কি পর্যাপ্ত ফ্যান্টাসি লেখক নেই আমাদের দেশে? না-কি ইচ্ছে করে ফ্যান্টাসি এড়িয়ে যাচ্ছেন তাঁরা?
হোল্ড অন।
আমাদের বেশ কয়েকজন প্রতিভাবান এবং উদীয়মান তরুণ ফ্যান্টাসি লেখক আছেন। 
দেখতে গেলে এই দেশে সবই আছে। আছে নতুন এক জগৎ তৈরি করার সবটুকু উপাদান। শুধু সেগুলো সংগ্রহ করে উপন্যাসে যুক্ত করার দেরি। এত এত ইতিহাস, দারুণ সব স্বর্গীয় জায়গা, জাতিগত পার্থক্য, শোষিত সমাজ, দুর্নীতির কালো দিক-সহ এমন সব কিছু যা দিয়ে অনায়াসে একটি ফ্যান্টাসি উপন্যাসের প্রাথমিক প্লট তৈরি করে ফেলা যায়। বাকিটা শুধু লেখকের মস্তিষ্কের খেলা। তবে এত কিছু থাকা সত্ত্বেও কেন তাঁরা পৃথিবীকে তাক লাগানোর মতো ফ্যান্টাসি উপন্যাস লিখছেন না? একদমই যে লেখেননি সেটাও বা কে বলল?
দেশে সাম্ভালার মতো অ্যাডভেঞ্চারে পূর্ণ ফ্যান্টাসি ট্রিলজি আছে, ড্রাগোমিরের মতো মেটাফিকশন, কুয়াশিয়া স্পেলমেকারের অনুসন্ধান-এর মতো হাই/এপিক ফ্যান্টাসি রয়েছে। এখানে শেষ নয়; শোণিত উপখ্যান ট্রিলজি, অন্ধ জাদুকরের মতো দারুণ কিছু ফ্যান্টাসি বই আছে। যা আরবান-লো ফ্যান্টাসি জনরায় অন্তর্ভুক্ত। পার্থাকাস ট্রিলজির জাদুর আংটি, জাদুর আয়না এবং ‘আগুনি’ নামে বিশাল এক এপিক ফ্যান্টাসি বইয়ের স্থানও আমাদের এই দেশে। এতে শুধু ফ্যান্টাসির যাত্রা সীমাবদ্ধ থাকেনি; আগামী দিনগুলোতে দেশে যে ফ্যান্টাসির জোয়ার নামছে তা নির্দ্বিধায় বলে দেওয়া যায়।
এখন মোদ্দা কথা হচ্ছে, শুধু লেখকরা লিখে গেলে তো হবে না; পাঠকদেরও একটু কষ্ট করে সেই উপন্যাস পড়ে ভালো-মন্দ প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে। হাতে গোনা ক’জন উক্ত উপন্যাসগুলো পড়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সেটা জানি না। তবে বিদেশি ফ্যান্টাসি পড়ে পাঠকদের মধ্যে ফ্যান্টাসি নিয়ে যে আগ্রহ জন্মেছে তা যদি মৌলিক ফ্যান্টাসির মাধ্যমে ধারাবাহিক আবহ ধরে রাখা যায়; তাহলে বিনা দ্বিধাদ্বন্দ্বে বলা যায়—আমাদের ফ্যান্টাসি জনরার ভবিষ্যৎ নক্ষত্রপুঞ্জের মতো ঝলমলে।
তৃতীয় বিশ্বের মতো একটি দেশে নেতিবাচক খবর বা ঘটনা ছাড়া অন্য কোনো কিছু যেখানে দ্রুত প্রচার বা প্রসার কোনোটাই ঘটে না; সাহিত্য তো সেখানে বিলাসিতা মাত্র। আর ফ্যান্টাসি… থাক।
তবুও লেখকরা যে অদম্য সাহস, সর্বোচ্চ ত্যাগ ও অমানুষিক শ্রমের বিনিময়ে নিজেদের কল্পনার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে ফ্যান্টাসি জনরায় লিখে যাচ্ছেন—সেই কারণে সাধুবাদ ও কৃতজ্ঞতা দুটোই জানাতে বাধ্য। আশা করছি, আগামী দিনগুলোতে এই দেশে ফ্যান্টাসির ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করবে। সেই সাথে দুর্দান্ত সব মৌলিক ফ্যান্টাসির উৎপাদন হবে।
এই পোস্ট লেখার আগে-পরে প্রকাশিত ফ্যাণ্টাসি মৌলিক বই সমূহ- 
  • মাদার ন্যাচার – আশরাফুল সুমন
  • এল ডোরাডো – আমিনুল ইসলাম
  • দণ্ডাধরের রাজ্য – শাহেদ খান
  • রাজকীয় উৎসর্গ – আল কাফি নয়ন
  • মিরিয়া – সুজানা আবেদীন সোনালী
  • যুদ্ধের সহস্র বছর পর – আমিনুল ইসলাম
  • আশীয়ানি – জুলিয়ান
এ-ছাড়া আরও কিছু মৌলিক ফ্যান্টাসি বই প্রকাশিত হয়েছে যা নিয়ে আলোচনা তেমন একটা হতে দেখা যায়নি। অনুবাদ হওয়া ফ্যান্টাসি বইয়ের লিস্ট এখানে উল্লেখ করছি না; কারণ পোস্টটি মৌলিক বই ও ফ্যান্টাসি সম্পর্কে ধারণা নিয়ে। যদি কোনো মৌলিক বইয়ের নাম বাদ পড়ে যায়; অনুগ্রহ করে কমেন্টে জানিয়ে দিবেন। ধন্যবাদ।
আগামী কয়েকদিন গ্রুপে আমার পড়া ফ্যান্টাসি বইগুলোর রিভিউ আপলোড দেওয়া হবে।
 আগুনি বইয়ের লিংক কমেন্টে দেওয়া আছে।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?